বাংলাদেশে গরুর পাশাপাশি এখন অনেকে উটও কোরবানি করেন। ছবি : সংগৃহীত।
মান্নত, শরিকি কোরবানি ও কোরবানির সাথে আকিকা দেওয়ার জরুরি বিধান
আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১৭:২১
(প্রিয়.কম) এক. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যে কোনো সংখ্যা যেমন - দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েয। (বাদায়ে-৬/২০৭)
দুই. কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত থাকলে কোরবানির কি হুকুম?
যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদেশ্য ব্যতীত শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই শরিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকা দরকার। (কাজি খান- ৩/৩৪৯)
তিন. জবাই করার পূর্বে কোরবানির পশু দ্বারা উপকৃত হওয়া যাবে কি-না?
কোরবানির পশু কেনা বা তা নির্দিষ্ট করার পর তাকে কোনো কাজে লাগানো বা তার দ্বারা উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন, হাল-চাষ করা, বোঝা ও যাত্রী বহন করা, পশম কাটা ইত্যাদি। তবে কেউ যদি করে ফেলে তবে হাল-চাষ, আরোহন, পশম ইত্যাদির মূল্য সদকা করে দিবে। (আলমগিরি-৫/৩০০,কাজি খান- ৩/৩৫৪)
চার. কোরবানির পশুর দুধ পান করা যায়?
কোরবানির পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না, তাহলে দুধ দোহন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আর দুধ দোহন না করায় পশুর কষ্ট হলে দুধ দোহন করে সদকা করে দিবে। নিজেরা পান করে ফেললে মূল্য সদকা করে দিবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে দুধের ওলানে ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দিবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। (শামি-৬/৩২৯,কাজি খান- ৩/৩৫৪, বাদায়ে-৬/৩২০, আলমগিরি-৫/৩০০, মাহমুদিয়া-১৭/৪৭৯)
পাঁচ. শরিকি কোরবানির গোশত কিভাবে বণ্টন করবে?
শরিকে কোরবানি করলে ওজন করে সমান ভাগে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়। (শামি-৬/৩১৭,মাজমাউল আনছর- ৩/১২১)
ছয়. কোরবানির গোশত কাকে কতটুকু দিবে?
কোরবানির গোশত একভাগ নিজের ঘরে, আরেক ভাগ গরিব-মিসকিনকে এবং আরেক ভাগ আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম; তবে জরুরি নয়। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধে নেই। (আলমগিরি- ৫/৩০০)
সাত. কোরবানির গোশত-চর্বি বিক্রি করা জায়েয কি-না।
কোরবানির গোশত-চর্বি ইত্যাদি বিক্রয় করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে সমুদয় মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (শামি-৬/৩২৮, কাজি খান- ৩/৩৫৪, আলমগিরি- ৫/৩০১)
আট. কোরবানির গোশত অমুসলিমদের দেওয়া যাবে?
কোরবানির গোশত অমুসলিম- হিন্দু, বৌদ্ধ, খস্টানদের দেওয়া জায়েয। (আলমগিরি- ৫/৩০০)
নয়. কেউ কোরবানি মান্নত করলে তা পূরণ করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
সে ধনী হোক বা গরিব। সুতরাং মান্নতকারী ধনী হলে তার নিজস্ব ওয়াজিব কুরবানি ও মান্নতের কুরবানি দুনোটাই ওয়াজিব হবে। আর গরিব হলে শুধু মান্নতের কোরবানি করাই জরুরি। (শামি-৬/৩২০, বাদায়ে-৬/২৮১, মাহমুদিয়া-১৭/৪৯৪)
মান্নতের কোরবানিও কোরবানির দিনসমূহে শর্তসাপেক্ষে আদায় করা জরুরি। অর্থাৎ নির্দিষ্ট পশু, পশুর বয়স, দোষমুক্ত হওয়া ইত্যাদি কোরবানির বিধি-বিধান মান্নতের বেলায়ও প্রযোজ্য। তবে মান্নতকারী যদি কোরবানি মান্নত করার পরিবর্তে শুধু পশু ‘জবাই’ করার মান্নত করে তখন তাতে কোরবানির শর্ত আরোপ হবে না। (শামি-৬/৩৩৩, বাদায়ে-৬/২৭৫, মাহমুদিয়া-১৭/৪৯৬)
দশ. কোরবানির সাথে আকিকা- কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ থাকলে কোরবানি হবে কি-না?
আকিকার ক্ষেত্রে ছেলে সন্তানের জন্য দু’টি আর কন্যা সন্তানের জন্য একটি স্বতন্ত্র পশু জবাই করা উত্তম। তা সত্ত্বেও গরু, মহিষ, কিংবা উটের মধ্যে কুরবানির সাথে আকিকার নিয়তেও অংশগ্রহণ করা যাবে। এতে কোরবানি ও আকিকা উভয়টিই বিশুদ্ধ হবে। (শামি-৬/৩২৬-৩৪০, কাজি খান- ৩/৩৫০)
লিখেছেন : মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী; প্রিন্সিপাল, জামিয়া সাবিলুর রাশাদ, গাজীপুর
প্রিয় ইসলাম/শামীমা সীমা