কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জনপ্রিয় ব্যান্ড 'দ্যা ক্র্যানবেরিস' এর গায়িকা ডোলোরেস ও’রিওর্ডান। ছবি কৃতজ্ঞতা: সংগৃহীত

একজন ও’রিওর্ডানের জীবনের কিছু অজানা কথা

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:০৪
আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:০৪

(প্রিয়.কম) মাত্র ৪৬ বছর বয়সেই চলে গেলেন নব্বই দশকের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ক্র্যানবেরিস’-এর প্রধান গায়িকা ডোলোরেস ও’রিওর্ডান। চলতি মাসের ১৫ তারিখ সকাল ৯ টার দিকে লন্ডনের একটি হোটেল রুমে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। গানের রেকর্ডিং এর কাজে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছিলেন সে সময়ে। পুলিস তদন্ত করে মৃত্যুর সঠিক কারণ চিহ্নিত করতে না পারলেও, সন্দেহজনক কোন ব্যাপার নেই বলেই নিশ্চিত করেছে।

এতো অল্প বয়সের মাঝে চলে গেলেও ও’রিওর্ডানকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে তার গায়কী ও  গানের জন্য। দারুণ প্রতিভাবান এই গায়িকা ক্র্যানবেরিসের মাধ্যমে উপহার দিয়েছেন জম্বি, লিংগার, ড্রিমস, অ্যানিমেল ইন্সটিংক্ট, প্রমিসেস এর মতো তুমুল জনপ্রিয় সকল গান। বিশেষ করে ‘জম্বি’ গানটির আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা গানটি প্রকাশ হবার ২৪ বছর পরে এসেও এতোটুকু কমেনি। অনেকেই ও’রিওর্ডানকে চেনেন শুধু এই জম্বি গানটির জন্যেই।

দারুণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই গায়িকা অনেকের দারুণ প্রিয় হলেও, তার জীবনের ব্যাপারে খুব বেশী তথ্য জানেন না অনেকেই। ও’রিওর্ডানের জীবনের ছয়টি চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। যা জানাতে সাহায্য করবে ব্যক্তিজীবনে কেমন ছিলেন গায়িকা ও’রিওর্ডান।

স্কুল জীবন থেকেই তিনি প্রশংসিত ছিলেন গানের জন্য

ভালোবাসাপূর্ণ এবং বড় আইরিশ পরিবারের মেয়ে ও’রিওর্ডান। তার জন্ম হয় কাউন্টি লিমেরিক নামক একটি স্থানে। এই স্থানটি কৃষিকাজের জন্য বেশ বিখ্যাত। সাত ভাই-বোনের মাঝে তিনি ছিলেন সবার ছোট। স্কুলে পড়ার সময়ে ছোট শিশু হিসেবে তার গাওয়া গান সবার নজর কেড়ে নিয়েছিল। লরেল হিল সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক এবং সহপাঠীরা তার দারুণ গলার কথা বর্ণনা করার সময় বলেন 'সেটা ছিল খুবই চমৎকার।'

তার উচ্চারণ ছিল বিতর্কপূর্ণ

সমালোচকেরা ও’রিওর্ডানের লিমেরিক উচ্চারণে গান গাওয়ার বেশ করা সমালোচনা করতেন। কারণ, অন্য ভাষার মানুষের কাছে তার উচ্চারণ দুর্বোধ্য হয়ে উঠত। কিন্তু এতো সমালোচনার পরেও তিনি তার নিজস্ব উচ্চারণের ধরণ থেকে সরে আসেননি। যা পরবর্তি সময়ে তার ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে। ও’রিওর্ডানের সকল ভক্তকুল তার গায়কীর মাঝে লিমেরিক উচ্চারণ ও উচ্চস্বরকেই বেশী ভালোবেসে থাকে।

ডোলোরেস ছবি

শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে দারুণ স্পষ্টভাষী ছিলেন

ও’রিওর্ডান শৈশবে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ছেলেবেলার সেই সকল ঘটনা তাকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়াত। নিজের জীবন সম্পর্কে বলার সময়ে তিনি তার শৈশবের দুঃসহ স্মৃতি মনে করে বলেন, 'সেটা খুবই জঘন্য একটি ব্যাপার।' যাই হোক, নিজের এই মানসিক কষ্টকে কমানোর একটি মাধ্যম ছিল গান। তার একক অ্যালবাম 'জাস্ট মাই ইমাজিনেশন' এর 'ফি ফাই ফো' গানটিতে তিনি শিশু নির্যাতন এবং শিশু নির্যাতকের ব্যাপারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'এটা সবচাইতে ঘৃণ্যতম অপরাধ।' তিনি আরো জানান, যারা শিশু নির্যাতনের সাথে জড়িত তারা খুব সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়।

তার ব্যান্ডটির নাম একটি দূর্ঘটনা ছিল

ও’রিওর্ডানের জনপ্রিয় ব্যান্ডের আসল নাম একদম প্রথমে ছিল 'দ্যা ক্র্যানবেরি স আস'। যেটা খুব দ্রুত উচ্চারণ করলে অনেকটা 'ক্র্যানবেরি সস' এর মতো উচ্চারিত হত। এমন ধরণের নামকরণের কিছুদিনের মাঝেই তারা নিজেদের ব্যান্ডের নাম থেকে বাড়তি শব্দগুলো বাদ দিয়ে দেন এবং শুধু ‘ক্র্যানবেরি’ শব্দটি রাখা হয়। এর মাঝে একদিন তাদের ব্যান্ডদল একটি মেইল পান, যেখানে তাদের ব্যান্ডকে 'দ্যা ক্র্যানবেরিস' হিসেবে অভিহিত করা হয়। মেইলটি পাওয়ার পরে ব্যান্ডদলের সদস্যরা নামটি পছন্দ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন এই নামটিই তারা রাখবেন। অদ্ভুত এই নামের ব্যাপারটি হয়তো সকল শ্রোতার মনে নাড়া দিয়েছিল সেই সময়ে। কারণ তাদের রেকর্ড ৪০ মিলিয়ন এর বেশী বিক্রি হয় পুরো বিশ্ব জুড়ে। রোলিং স্টোন এর মতে ইউটু এর পরে এটাই আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় মিউজিক্যাল এক্সপার্ট।

ও’রিওর্ডান মানসিক সমস্যার ভুক্তভোগী ছিলেন

যদিও একজন হার্ড-রকার হিসেবে ও’রিওর্ডান দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন, তিনি খুব কমই বের হতেন সফরের জন্য। কারণ তিনি নিজের মানসিক সমস্যা নিয়ে নিজের ঘরে থাকতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন এবং নিজের সমস্যাগুলো থেকে বের হবার চেষ্টা করতেন। তার এই মানসিক সমস্যার দরুন ২০১৩ সালে তিনি আত্মহত্যার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সে সময়ে ও’রিওর্ডান সন্তানেরা তাকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। শুধু সেই সময়েই নয়, তারা ও’রিওর্ডানের অ্যানোরেক্সিয়া এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সমস্যা কাটিয়ে উঠতেও অনেক সহযোগিতা করেছিলেন।

তিনি একজন ফেমিনিষ্ট আইকন ছিলেন

ও’রিওর্ডান কে বলা হয়ে থাকে 'পাওয়ার হাউজ ভোকালিষ্ট'। সেই নব্বই দশকের সময়ে তার বয়সী একজন তরুণী হলে প্রথম উদাহরণ যিনি 'ফিমেল ভোকালিষ্ট' হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি। প্রতিভা ও যোগ্যতাকে তিনি মূল্যায়ন করতে চেয়েছেন সবসময়, নিজের সৌন্দর্য্যকে নয়। তিনি বলেছেন, 'আমি একজন ফেমিনিষ্ট। অনেকেই নিজের লিঙ্গকে কাজে লাগিয়ে জনসম্মুখে নিজেকে প্রকাশ করতে চান অথবা সবার আকর্ষণ পেতে চান। আমার মনে হয় না তার কোন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমার মতে নারীরা পুরুষদের সমান।'

সময়ের সাথে সাথে ও’রিওর্ডানের অনুপস্থিতি সকলেই অনুভব করবেন। তার চমৎকার কাজের মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন সকলের কাছে একজন জনপ্রিয় গায়িকা হয়ে। বলা হয়ে থাকে তার গাওয়া জনপ্রিয় 'জম্বি' গানটি কখনোই কেউ তার মতো করে গাইতে পারবেন না। ও’রিওর্ডানের গায়কীর ফলেই জম্বি গানটি তুমুল জনপ্রিয় হয় বলে মনে করেন অনেকে! কারণ যেটাই হোক, দুই যুগ পার করে ফেলা গানটি এখনও শুনতে হয় মুগ্ধ হয়ে। 

সূত্র: Simplemost

প্রিয় লাইফ/ আর বি