কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

নিমার্তা দীপংকর দীপন। ছবি : রাকিব/ প্রিয়.কম

বাণিজ্যিক ভাবে সফল মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা তৈরির চেষ্টা করতে চাই : দীপংকর দীপন

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:০১
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:০১

(প্রিয়.কম) প্রথম ছবি দিয়েই দর্শকের প্রত্যাশার পারদে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নির্মাতা দীপংকর দীপন। এরপর থেকে বেশ সতর্কতার সাথেই পথ চলছেন তিনি। দ্বিতীয় সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক। তবে ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর মতো কমার্শিয়াল সিনেমার ঘরানা থেকে বের হয়ে চ্যালেঞ্জ নিলেন দ্বিতীয় ছবিতে। আর প্রেক্ষাপট হিসেবে বেছে নিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধকে। ‘যে গল্প সাহসের, যে গল্প বীরত্বের’ এ নিয়েই তার পরবর্তী সিনেমা ‘ডু অর ডাই’।

১৭ জানুয়ারি, বুধবার অপারেশন কিলো ফ্লাইটের অধিকাংশ বীর নায়কের উপস্থিতিতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে বেলা ১২টায় এই চলচ্চিত্রের কনসেপ্ট পোস্টার উন্মোচনের মাধ্যমে নাম ঘোষণা করা হয়। থ্রি হুইলার্স লিমিটেড ও মেইন স্কয়ার কর্পোরেশনের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হতে যাচ্ছে ছবিটি। এ উপলক্ষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন দীপংকর দীপন। এক ফাঁকে কথা হয় প্রিয়.কমের সঙ্গেও। তারই কিছু অংশ প্রিয়.কমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রিয়.কম : প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তৈরি হতে যাচ্ছে এয়ারক্র্যাফট অপারেশন মুভি ‘ডু অর ডাই’। এর নেপথ্যে যে বিষয়টি কাজ করেছে সে সম্পর্কে জানতে চাই।

দীপংকর দীপন : মুক্তিযুদ্ধের অবিশ্বাস্য ও দুঃসাহসিক ‘অপারেশন কিলো ফ্লাইট’-এর বীর নায়কদের অন্যতম ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম বীর উত্তমের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অবিশ্বাস্য এক দুঃসাহসিক গল্প নিয়ে তৈরি হবে সিনেমাটি। অপারেশন কিলো ফ্লাইটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন সম্পর্কে দেশের মানুষের অত্যন্ত কম জানা। আর শামসুল আলম বীর উত্তমের জীবনের নানা নাটকীয় ঘটনা ‘ডু অর ডাই’-এর মতো একটি কঠিন চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করেছে। ‘ডু অর ডাই’ বাংলাদেশের প্রথম এয়ারক্র্যাফ্ট অপারেশন মুভি এবং এরিয়াল ওয়ার ফেয়ার হিসাবে চিন্তা করলে ‘ডু অর ডাই’ এই উপমহাদেশের প্রথম সিনেমা।

প্রিয়.কম : বর্তমানে সিনেমাটির প্রি-প্রোডাকশনের কাজ কতটুকু এগিয়েছে?

দীপংকর দীপন : চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্যের কাজ চলছে। ক্রমান্বয়ে এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে, ব্যাপক গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ে কাজের মাধ্যমে চিত্রনাট্য চূড়ান্ত করা হবে।

প্রিয়.কম : আর কাস্টিং-এর বিষয়টি?

দীপংকর দীপন : চিত্রনাট্যের কাজ শেষ হলেই চলচ্চিত্রটির কাস্টিং চূড়ান্ত হবে। এরপর চলচ্চিত্রটির নায়ক-নায়িকার নাম ঘোষণা করা হবে। চরিত্র উপযোগী বাংলাদেশের তারকা শিল্পীদের কাস্টিং করা হবে। সেখানে প্রথম সারির তারকা ও নতুনদের সমাবেশ ঘটানো হবে। এছাড়া মুম্বাইয়ের তারকা শিল্পীদেরও কাস্ট করা হবে, চরিত্রের চাহিদার জন্য। ইচ্ছে রয়েছে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এর শুটিং শুরু করার। আর ২০১৯ সালে ছবিটি মুক্তির।  গত ২ মাসে গবেষণার প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে।

‘অপারেশন কিলো ফ্লাইট’-এর বীর নায়কদের অন্যতম ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম (বীর উত্তম)/ ছবি : রাকিব/প্রিয়.কম। 

প্রিয়.কম : ‘ঢাকা অ্যাটাকে’র পর এ ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করার চিন্তার কারণ কী?

দীপংকর দীপন : তরুণ প্রজন্ম সিনেমাটি দেখার মাধ্যমে ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। আর লগ্নিকৃত অর্থ উঠে আসার মাধ্যমে অন্য প্রযোজকরাও এ ধরনের সিনেমা নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে মনে করছি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় বীরদের বীরত্বগাথা দর্শকের সামনে তুলে আনা খুব দরকার।

প্রিয়.কম : আপনাদের একটি টিম তো শুনলাম দুই দিন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। জানতে চেয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে অপারেশন কিলো ফ্লাইট সম্পর্কে। অভিজ্ঞতাটা কেমন?

দীপংকর দীপন : আমাদের এই অপারেশনটি সম্পর্কে দেশের মানুষ কতটা জানেন, সেটি জানতেই আমাদের একটি টিম ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দুই দিন ধরে ২০০-এর বেশি মানুষের সাথে কথা বলে, তাদের মতামত জানতে চায়। কিন্তু আমরা একটি মানুষের কাছ থেকেও অপারেশন কিলো ফ্লাইট সম্পর্কে ন্যূনতম তথ্য পাইনি। খুব কষ্ট নিয়ে সে ভিডিওটি দেখছি। যদিও এই না-জানা নিয়ে তাদের কোনোরকম দুঃখবোধ নেই। আর তাদের কেনই বা জানতে হবে? ঠিক এই প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের এই পুরো প্রজেক্টটি।

প্রিয়.কম : যারা জানেন না, তাদের উদ্দেশে অপারেশন কিলো ফ্লাইট সম্পর্কে বক্তব্য কী?

দীপংকর দীপন : বাঙালি জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা ১৯৭১, মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধে সামরিক-বেসামরিক বাহিনি ও দেশের আপামর জনসাধারণ সবাই মিলে জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। দুঃসাহসিক, অসাধারণ, অবিশ্বাস্য, গায়ে কাঁটা দেয়ার মতো একটি অপারেশন ‘অপারেশন কিলো ফ্লাইট’। আমাদের গৌরবের ইতিহাস। অপারেশন কিলো ফ্লাইট পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর বাঙালি অফিসার ও অন্যান্য বেসামরিক পাইলটদের আত্মত্যাগের ইতিহাস। একটি হেলিকাপ্টার ও অটার বিমান নিয়ে এক দুঃসাহসিক সামরিক অভিযান। আত্মঘাতী অপারেশন, দক্ষতা, দেশপ্রেম ও সাহস দিয়ে গড়া অনন্য উদাহরণ। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পত্তনের ইতিহাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বিমান আক্রমণের ইতিহাস। বিষয়টা সবারই জানা দরকার।

চলচ্চিত্রটির কনসেপ্ট পোস্টার/ ছবি : সংগৃহীত

প্রিয়.কম : আপনি শুরুতেই বলেছেন, শামসুল আলম বীর উত্তমের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অবিশ্বাস্য এক দুঃসাহসিক গল্প নিয়ে তৈরি হবে সিনেমাটি। কেন তার জীবনই বেছে নিলেন এ সিনেমা নির্মাণের জন্য?

দীপংকর দীপন : তার জীবনে আছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। গায়ক, রোমান্টিক, স্মার্ট এয়ারফোর্স অফিসার। সর্বস্ব ত্যাগী অমানবিক অত্যাচার সহ্য করা একজন দেশপ্রেমিক বাঙালি। মিশন সুইসাইডে যাওয়া সাহসী দক্ষ পাইলট। ফুর্তি, আবেগ, সংগীত, গতি, নাটকীয়তা, দেশপ্রেম, নায়কোচিত সাহস, উত্তেজনা, সাসপেন্স ও শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা, সব আছে তার জীবনের ঘটনার বাঁকে বাঁকে। এমন একজন বীরকে নিয়ে কেন নয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাণিজ্যিক সিনেমা?

প্রিয়.কম : সিনেমার নাম ‘ডু অর ডাই’, কেন?

দীপংকর দীপন : মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিকতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সাধারণ প্রচলিত ধারণার পরিবর্তন করতে। মৃত্যকে তারা ভয়ের জায়গা থেকে দেখেননি, দেখেছেন দায়িত্বের জায়গা থেকে। বিপদের মধ্যেও মনোবল চাঙ্গা রাখবার জন্য নিজেদের মধ্যে তারা আনন্দ করতেন, এমনকি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে অত্যাচারিত হতে হতেও তারা নিজেদের মধ্যে মজা করতেন। অত্যাচারকে ভয় পেতেন না বলেই শত অত্যাচারের মুখে তারা গোপন তখ্যগুলো ফাঁস করেননি কখনো। এর জন্যই এ নামটি বেছে নিয়েছি।

এছাড়া এয়ার ফোর্স ও সেনাবাহিনী থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য জীবন দেয়াটা দায়িত্ব মনে করতেন এবং এই দায়িত্ব নিয়ে তাদের কোনো দুঃখবোধ ছিল না কখনো। জীবন সঁপে দিয়েই তারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। এই যুদ্ধ তাদের কাছে তাই ‘ডু অর ডাই’। এই সিনেমার নায়ক শাসুল আলম, বীর উত্তম, অপারেশন কিলো ফ্লাইটকে নিজে ডাকতেন ‘ডু অর ডাই’ নামে। তিনি ও তার সাহসী কো-পাইলট ক্রুরা বেঁচে ফিরে আসার জন্য অপারেশনে যাননি, গিয়েছিলেন সফল হতে অথবা মরতে।

প্রিয়.কম : আমাদের দেশের বেশ কয়েকজন মেধাবী নির্মাতা মুক্তিযুদ্ধের ওপর অসাধারণ কিছু সিনেমা নির্মাণ করেছেন। যেগুলো সফলতার মুখ দেখেছে। আপনি সে ধারাবাহিকতায় বাণিজ্যিকভাবে সফল মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নির্মাণ করতে চান। এর পেছনের কারণটা কী?

দীপংকর দীপন : কারণ আমরা খুব ভালো করেই জানি বাণিজ্যিক সফলতার কোনো সূত্র নেই। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মুভি আমাদের সাহস জুগিয়েছে, সিনেমা হলে দর্শক তা গ্রহণ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতায় আমরা স্মার্টনেসকে পুঁজি করে একটি বাণিজ্যিক ভাবে সফল মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা তৈরির চেষ্টা করতে চাই। বিনিয়োগকৃত অর্থ উঠে এলে জাতীয় বীরদের নিয়ে আরো সিনেমা তৈরি হবে। কারণ প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার গল্প নিয়েই এক একটি গর্ব করার মতো সিনেমা হতে পারে।

প্রিয়.কম : এ ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা তো বেশ চ্যালেঞ্জেরও কাজ, তাই নয় কি?

দীপংকর দীপন : এ ধরনের সিনেমার নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন, উপমহাদেশেও এই ধরনের মুভি দেখা যায় না। তাই আমাদের কাছে এক ভীষণ বড় চ্যালেঞ্জের নাম ‘ডু অর ডাই’। আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন কাজটা করেছেন। তাদের কাছ থেকে সাহসের পাঠ নিয়ে দেশকে ভালোবেসে এই কঠিন কাজটাও করে ফেলতে চাই আমরা। এটাও আমাদের কাছে একধরনের দেশের জন্য যুদ্ধ।

প্রিয়.কম : এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ করতে গেলে তো বড় বাজেটের দরকার হয়। সেটা কীভাবে সমন্বয় করেছেন?

দীপংকর দীপন : আমাদের ছবির বাজার তো সীমিত, তাই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও স্পন্সরদের সাথে মিলিয়ে একটি সমন্বিত বাজেট করেছি। যাতে সিনেমাটি নির্মাণ করতে পারি।

 প্রিয় বিনোদন/গোরা/আজাদ চৌধুরী