কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রাকৃতিক ফল ভিটামিনের অভাব পূরণে ও দাঁতের মাড়ি সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। ছবি: প্রিয়.কম

মাড়ির রক্তক্ষরণ ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে যা করবেন

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:৪০
আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:৪০

(প্রিয়.কম) দাঁত ও মুখের নানা সমস্যার মধ্যে গুরুতর দুটি হলো মাড়ির রক্তক্ষরণ ও দুর্গন্ধ। এ দুটি সমস্যা নিয়ে প্রিয়.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন ডা. জিনিয়া মাহমুদা কাইয়ুম। 

‘মতিন ডেন্টাল কেয়ার’ নামের দন্তসেবা প্রতিষ্ঠানের সহকারী এই চিকিৎসক জানান, এই দুটি সমস্যা পরস্পর সম্পর্কিত। কারণ দাঁতের মাড়ির রক্তক্ষরণ হয় সংক্রমণ, দাঁতের যত্নের অভাব ও অন্যান্য সমস্যার ফলে। অন্যদিকে মাড়ির সংক্রমণ ও অযত্নের ফলেই মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয়।

মাড়িতে রক্তক্ষরণের বিষয়ে ডা. জিনিয়া বলেন, 'অনেকগুলো কারণেই দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর মাঝে প্রধান কারণ দাঁতের এবং মুখের ভেতরের সঠিক যত্ন না নেওয়া। এর সাথেই দেখা দেয় দাঁত ও দাঁতের গোঁড়ার নানান সমস্যা। দাঁতের সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন না হওয়ার ফলেও মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। কারণ দীর্ঘদিন দাঁতের ট্রিটমেন্ট না করলে মাড়ি দুর্বল হয়ে যায়। এ ছাড়াও অনেকের শরীরে ভিটামিন-সি ও কের অভাব থাকে। এর ফলে রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি হরমোনের পরিবর্তন থেকেও এই সমস্যা দেখা দেয় অনেক সময়।'

ডা. জিনিয়ার মতে, কিছু পদক্ষেপ নিলে দাঁতের মাড়ির রক্তক্ষরণ তাৎক্ষনিকভাবে বন্ধ করা যায়। এ ছাড়া সহজ কিছু কাজ করলে মুখের দুর্গন্ধও দূর করা যায়।  প্রিয়.কমের পাঠকদের জন্য সেগুলো তুলে ধরা হলো।

নীম পাতা চিবানো

নীম পাতার বহুবিধ ব্যবহার সম্পর্কে জানা থাকলেও, মাড়ির রক্তক্ষরণ বন্ধে এই পাতার উপকারিতা নিয়ে জানেন না অনেকেই। নীম পাতা ঔষধি গুণের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। অন্যান্য ব্যবহারের পাশাপাশি দুই-তিনটি পরিষ্কার নীম পাতা চিবালেও দাঁতের মাড়ির রক্ত পড়া বন্ধ হয়। কারণ এই পাতায় আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। তা রক্তক্ষরণ জন্য দায়ী দাঁতের মাড়ির ইনফেকশন (সংক্রমণ) সারাতে কাজ করে থাকে।

লবঙ্গ

ঝাঁঝযুক্ত এই প্রাকৃতিক উপাদানটি দাঁত ও মাড়ির জন্য খুবই উপকারী। লবঙ্গের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান তাৎক্ষনিকভাবে দাঁতের গোঁড়ার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে কাজ করে। মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হলে তিন-চারটি শুকনো লবঙ্গ সময় নিয়ে চিবোতে হবে। ঝাঁজ সহ্য না হলে এক কাপ পানিতে ৫-৬টি লবঙ্গ নিয়ে পানিটি ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলি করতে হবে।

লবণ-পানি দিয়ে কুলি করা

দাঁতের মাড়ির রক্তক্ষরণের ক্ষেত্রে লবণ-পানি দিয়ে কুলি করা সবচাইতে প্রাচীন, সহজ ও উপকারী একটি উপায়। কারণ লবণ হলো প্রদাহ-বিরোধী। এটি জীবণুনাশক উপাদান, যা দাঁতের মাড়ির প্রদাহ, ফুলে যাওয়া, ব্যথাভাব, সংক্রমণ দ্রুত কমাতে কাজ করে। মাড়ির রক্তক্ষরণ দেখা দিলে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে কুলি করতে হবে। দিনে দুই থেকে তিনবার কুলি করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যাবে।

ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেস্ট

দাঁতের ও মুখের ভেতরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা খুবই জরুরি। ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেস্ট দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় ভালো কাজ করে থাকে। প্রতিদিন অবশ্যই দুবার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। বিশেষ করে খাবার গ্রহণের পরে। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দাঁতের মাড়িতে থাকা ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং দাঁতের আশেপাশের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাই যেকোনো টুথপেস্ট ব্যবহার না করে ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেস্ট কেনার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

ভিটামিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ

দাঁতের মাড়ির রক্তক্ষরণ বন্ধে ভিটামিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষ করে ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-কে থাকা খাবার মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই কার্যকর।  বিভিন্ন ধরণের টকজাতীয় ফল (লেবু, কমলালেবু, জাম্বুরা, আঙ্গুর), শাক, তেলযুক্ত মাছ ও ডিমে এ দুটি ভিটামিন আছে। এসব খাবার গ্রহণের পাশাপাশি মাড়ির রক্তক্ষরণ দেখা দিলে দন্ত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

স্কেলিং

দাঁতের গোঁড়া অথবা মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যাটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাঁতের গোঁড়ায় তৈরি হওয়া প্লাক ক্যালকুলাসের (দাঁতের চারপাশে জমে থাকা পাথর) জন্য দেখা দেয়। দীর্ঘদিন দাঁতের গোঁড়ায় প্লাক জমে থাকলে মাড়ি নরম হয়ে যায় ও রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। এ কারণে প্রতি ছয় মাস পর স্কেলিং করা মাড়ির সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

মাড়ির রক্তক্ষরণ রোধের পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য কী করণীয় সেটা সম্পর্কেও বেশ কিছু টিপস দিয়েছেন ডা. জিনিয়া।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে করণীয়

১. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে কুসুম গরম পানি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত একবার কুলি করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

২. প্রতি দুই মাস পর ব্যবহৃত দাঁত মাজার ব্রাশ বদলাতে হবে। কারণ এক ব্রাশ বেশি দিন ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে।

৩. মুখের দুর্গন্ধ তাৎক্ষণিকভাবে দূর করতে চাইলে অল্প পরিমাণে লেবু অথবা কমলালেবুর খোসা চিবালে উপকার পাওয়া যাবে।

৪. প্রতিদিন চার-পাঁচটি পুদিনা অথবা ধনিয়া পাতা চিবানোর অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।

৫. শুধু দাঁত মাজা কখনোই যথেষ্ট নয়। ভালোমতো ফ্লসিংও করতে হবে। কারণ, দাঁত মাজার পরও দুই দাঁতের মাঝে ক্ষুদ্র খাদ্যকণা থেকে যায়, যেটা পচে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। তাই প্রতিবার খাবারের পর ফ্লসিং করা জরুরি।

প্রিয় লাইফ/কে এন দেয়া