কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা তদন্তে নাগরিক কমিশন’ শিরোনামে গঠিত কমিশনের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। সংগৃহীত ছবি

রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তদন্ত কমিশন গঠন

হাসান আদিল
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০১৭, ২২:১৪
আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭, ২২:১৪

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের গণহত্যার ঘটনার তদন্তে একটি নাগরিক কমিশন গঠন করেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বিচারপতি শামসুল হুদাকে প্রধান করে গঠন করা তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন ৩৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

১১ অক্টোবর বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা তদন্তে নাগরিক কমিশন’ শিরোনামে গঠিত কমিশনের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে বিচারপতি, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষাবিদসহ দেশের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মিয়ানমার সরকার নিজ দেশের নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচারে গণহত্যা এবং জোর করে বাস্তুচ্যুত করে অমানবিক আচরণ করে যাচ্ছে, তা তদন্ত শেষে আন্তর্জাতিকভাবে কমিশন গঠন করা হবে। পরে আন্তর্জাতিক আদালতে বিষয়টি উত্থাপনেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী যাতে সুবিধা নিতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, ‘যদি আমাদেরকে তাদের (রোহিঙ্গা) পুষে রাখতে হয়, তা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এর ভেতর থেকে যে কোনো বিস্ফোরণ ঘটবে না এমন কথাও বলা যায় না। বাংলাদেশের জনগণকে বাঁচানোর জন্য আবার যদি সংগ্রাম করতে হয়, আমার এ বৃদ্ধ বয়সে আমি সে সংগ্রাম করতে প্রস্তুত।’ 

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘আমরা একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এ কমিশন বার্মার সরকার বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

প্রসঙ্গত, গত মাসের ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৩০ পুলিশ পোস্টে একসঙ্গে হামলার জেরে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে, ধর্ষণের মাধ্যমে হত্যা ও বিভৎস নির্যাতনের খবর উঠে আসতে থাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটির সরকার। এরপরও তারা নির্যাতন বন্ধ করেনি। উল্টো মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের দাবি, রোহিঙ্গারাই বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। এমন দাবির সমর্থনে সাংবাদিকদের ভুয়া ছবিও সরবরাহ করা হয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। 

নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গার ঢল বাড়তে থাকে। প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এক সময় তা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তবে বর্তমানে পালিয়ে আসার হার কমে গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। 

সম্প্রতি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত প্রায় ২১৪টি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একইসঙ্গে সংস্থাটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সহিংসতা ও নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

এদিকে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ নাগরিত্ব এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। 

এছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেন। যার মধ্যে মিয়ানমার সেনাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত। মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত চীনও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দেশটিকে প্রভাবিত করার আশ্বাস দিয়েছে।

প্রিয় সংবাদ/সজিব