কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

রোহিঙ্গাদের সবচে বড় শিবির রয়েছে কুতুপালংয়ে। ছবি: ফোকাস বাংলা

অর্থ জোগাতে পতিতাবৃত্তিতে রোহিঙ্গা নারীরা

জাহিদুল ইসলাম জন
জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, নিউজ এন্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:১৫
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:১৫

(প্রিয়.কম) খাবার ও পানির মতো জীবনের জন্য অপরিহার্য চাহিদাগুলো মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের। আর এই হতাশায় ডুবতে থাকা রোহিঙ্গা নারীরা গোপনে জড়িয়ে পড়ছেন যৌন বিক্রির কাজে অর্থাৎ তারা পতিতাবৃত্তিতে নামছেন। বাংলাদেশ সরকার ও সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গা নারীদের সঠিক তথ্য না থাকলেও থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন'র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে এমন অন্তত ৫০০ নারী রয়েছেন।

ওই শিবিরের একটি কুঁড়ে ঘরে এরকম চার নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন সংস্থাটির প্রতিবেদক। ওই নারীদের সংক্ষিপ্ত নাম প্রকাশ করলেও বিস্তারিত পরিচয় জানানো হয়নি। তাদের একজন ২৬ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘কেউ যদি জানতে পারে আমরা কী করছি, তাহলে আমাদের মেরে ফেলেবে।’

গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ঘরবাড়ি আর সহায়সম্বল ছেড়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে সাহায্য সংস্থাগুলো।

উখিয়ার কুতুপালংয়ে রয়েছে সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শিবির। সম্প্রতি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সেখানে আগে থেকেই ছিলেন আরও কয়েক হাজার মানুষ। রয়টার্স বলছে, পুরানো রোহিঙ্গা নারীরাই মূলত পতিতাবৃত্তিতে থাকা নারীদের চালায়। আর তাতে যোগ দিচ্ছেন নতুন আসা রোহিঙ্গা নারীরা।

নুর নামে এক দালাল ওই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘১৯৯২ সালে স্থাপিত কুতুপালং শিবিরের অন্তত ৫০০ নারী যৌন ব্যবসায় জড়িত। নতুন আসা রোহিঙ্গা নারীদের দিকেও নজর দিয়েছে নিয়োগকারীরা।’

জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপি'র জেন্ডার বিশেষজ্ঞ সাবা জারিব রয়টার্স'র কাছে কুতুপালংয়ে যৌনকর্মী থাকার কথা স্বীকার করলেও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ সম্প্রতি এক রিপোর্টে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘বিশৃঙ্খল ক্যাম্প জীবন রোহিঙ্গা শিশু ও নারীরা পাচারকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হতে পারেন।’ রক্ষণশীল মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা পতিতাবৃত্তিকে ঘৃণার চোখে দেখে থাকে। ফলে প্রায়ই এসব বিষয়ে তাদের চোখ বন্ধ করে থাকতে হয়।

নুর বলেন, ‘লোকজন ভাব দেখায় এই জিনিস এখানে নেই। তবে রোহিঙ্গা নারীরা ক্যাম্পের বাইরে তাদের বাংলাদেশি খদ্দেরদের সঙ্গে দেখা করে থাকে। রোহিঙ্গা পুরুষদের এড়িয়ে চলে তারা। কারণ এখানে গুজব তাড়াতাড়ি ছড়ায়।’

নুর জানান, অনেক শিশুও এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। দিনে একবেলাও পেটভরে খাবার না পাওয়া এসব শিশুরা বাবা-মায়ের অজান্তেই এই পেশায় জড়াচ্ছে।

রিনা নামের ১৮ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা নারী প্রায় দশ বছর ধরে কুতুপালং শিবিরে বাস করেন। নিজের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ না করে তিনি জানান, দুই বছর আগে এক মাতালের সঙ্গে তাকে বিয়ে দিয়েছিল পরিবার। সন্তানের জন্ম হলে তাকে রেখে পালিয়ে যায় তার স্বামী। পরে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে যান তিনি।

কামরু নামের এক যৌনকর্মী জানান, এই ক্যাম্পেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। সব সময় পেটে ক্ষুধা থাকায় এক সময় বাধ্য হন যৌন পেশায় নামতে।

রেডক্রসের জেন্ডার প্রটেকশন বিশেষজ্ঞ লিসা একরিও বলেন, সাহায্য সংস্থাগুলো এখানকার বাসিন্দাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে পাচারের শঙ্কা বাড়বে।

রোমিদা নামের আরেক যৌনকর্মী বলেন, ক্ষুধা আর অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গিয়ে পতিতাবৃত্তিকেই জীবিকা হিসেবে নিতে বাধ্য হন তিনি। প্রথমবার এক বাংলাদেশি যুবককে সঙ্গ দেওয়ার বিনিময়ে পেয়েছিলেন এক হাজার টাকা। তবে তার অর্ধেক নিয়ে গিয়েছিল দালাল।

রোমিদা গড়ে সপ্তাহে তিন জন খদ্দেরের সঙ্গে দেখা করে থাকেন। প্রায়ই তাকে এ কাজের জন্য কক্সবাজার শহরে পর্যন্ত যেতে হয়। আর সেজন্য তিনি আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা বা শপিংকে অজুহাত হিসেবে দেখান।

এ সব রোহিঙ্গা নারী যৌনকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কাছে নিজেদের বিক্রি করেন। এইচআইভির মতো যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকিতে থাকলেও এই নারীদের এ সব বিষয়ে স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই।

সূত্র: থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন

প্রিয় সংবাদ/শান্ত