কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সংগৃহীত ছবি

রিজার্ভ চুরি: উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করছে যুক্তরাষ্ট্র

মেহেদী হাসান
সহ-সম্পাদক, বিজনেস এন্ড টেক
প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০১৭, ২০:২২
আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭, ২০:২২

(প্রিয়.কম) যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার হাত রয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়ার পর দেশটির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

২৮ জুলাই শুক্রবার যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক সংবাদে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সনি স্টুডিওতে হামলা ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পেছনে উত্তর কোরিয়ার হাত ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি আইনজীবীরা পিয়ংইয়ং এর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ ল্যাজারাস বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি করে। এ ছাড়া এই গ্রুপটি সম্প্রতি ভিয়েতনামের ব্যাংক, ২০১৪ সালে সনি স্টুডিওতে হামলা এবং ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিন্যানসিয়াল সিকিউরিটি ইন্সটিটিউটে (এফএসআই) সাইবার হামলার ঘটনা ঘটায়।

এফএসআই এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে হামলা চালায় ল্যাজারাস এর হ্যাকাররা।

কিছুদিন আগে রাশিয়াভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কিও দাবি করে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার একদল হ্যাকার জড়িত রয়েছে।

এর কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চীনা মধ্যসত্ত্বভোগীদের সহায়তায় উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের অর্থ লোপাট করেছে।

তখন এফবিআইর তদন্ত কর্মকর্তারাদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা উত্তর কোরিয়া যদি ডিজিটাল চুরির আশ্রয় নেয় তবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এফবিআইর কর্মকর্তারা দাবি করেন, হ্যাকাররা একই কোড ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংক, ভিয়েতনামের ব্যাংক, ২০১৪ সালে সনিতে হামলা এবং ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সাইবার হামলার ঘটনা ঘটায়।

ক্যাসপারস্কির প্রতিবেদনে বলা হয়, ল্যাজারাসের হ্যাকাররা শুরুতেই উত্তর কোরিয়ার একটি আইপি অ্যাড্রেস থেকে ইউরোপের একটি সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করে। যে সার্ভার ল্যাজারাসের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ক্যাসপারস্কির গবেষক ভিটালি কামলুক তখন বলেন, শুরুতেই তারা উত্তর কোরিয়া ও ল্যাজারাসের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টির প্রমাণ পান। ২০০৯ সাল থেকেই এই হ্যাকিং গ্রুপটি সক্রিয় রয়েছে বলে তাদের কাছে প্রমাণাদিও রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরির অর্থ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।

শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপাইনের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে।

বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল।

ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়। গত বছরের ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে, কার বরাবরে ভুয়া পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন পাঠানো হয়েছিল, অবৈধ পরিশোধ ঠেকাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না, রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রায় এক মাস গোপন রাখা যৌক্তিক ছিল কি না, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবহেলা ছিল কি না এবং অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, গৃহীত কার্যক্রমের পর্যাপ্ততা ও পুনরাবৃত্তি রোধে গৃহীত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কমিটিকে।

বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গত ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় ফরাসউদ্দিনের কমিটি। এরপর ৩০ মে দেওয়া হয় পুরো প্রতিবেদন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কয়েক দফা সময় দেওয়ার পরও ওই প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশিত না হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিষয়ক সংসদীয় কমিটিও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি যাওয়া প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় উদ্ধার হওয়া কয়েক কোটি টাকা ফিরিয়ে এনেছে সরকার

প্রিয় বিজনেস/কামরুল