কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

নববিবাহিত একজন নারী ও একজন পুরুষের মিলিত হাত। ছবি : সংগৃহীত

মুসলিম পুরুষরা কি অমুসলিম নারীদের বিয়ে করতে পারবে? 

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:২০
আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:২০

(প্রিয়.কম) আমাদের সমাজে অনেক মুসলমানই আছেন যারা ভিন্ন ধর্মের নারীদেরকে বিবাহ করতে চায়। বিশেষ করে অনেকে খ্রিষ্টান নারীদেরকে বিবাহ করতে চায়। এই বিষয়ে আসলে ইসলামের বিধান কী? কোনো মুসলমান চাইলেই কি অন্য ধর্মের নারীকে বিবাহ করতে পারবেন? অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, একজন মুসলমান পুরুষ একজন খ্রিষ্টান নারীকে পছন্দ করেছেন। তিনি তাকেই বিবাহ করতে চান। আবার নারীও তাকে কথা দিয়েছে। যদি উভয়ের বিবাহ হয় তাহলে খ্রিষ্টান নারীটি মুসলিম হয়ে যাবে। এমন ক্ষেত্রে কি সেই খ্রিষ্টান নারীকে বিবাহ করা যাবে? এই বিষয়ে ইসলামের বিধান কী? 

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, আজ তোমাদের জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র বস্তু হালাল দেয়া হয়েছে। আহলি কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। আর সংরক্ষতি মেয়েরা তোমাদের জন্য হালাল, তারা ঈমানদারদের দল থেকে হোক বা এমন জাতিদের মধ্য থেকে হোক, যাদেরকে তোমাদের আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তোমরা তাদের মোহরানা আদায় করে দিয়ে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের রক্ষক হবে। তোমরা অবাধ যৌনচারে লিপ্ত হতে পারবে না অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবে না। আর যে ব্যক্তি ঈমানের পথে চলতে অস্বীকার করবে, তার জীবনের সকল সৎ কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যাবে এবং আখেরাতে সে হবে নিঃস্ব ও দেউলিয়া। (সূরা-মায়েদা, আয়াত-০৫)। 

এই আয়াতে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কথা বলা হয়েছে। কেবলমাত্র তাদের মেয়েদেরকেই বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে আর এ সঙ্গে শর্তও আরোপিত হয়েছে যে, তাদের মুহসানাত (সংরক্ষিত মহিলা) হতে হবে। এ নির্দেশটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিরূপণের ব্যাপারে ফিকাহবিদদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইবনে আব্বাসের (রা.) মতে এখানে আহলি কিতাব বলতে সে সব আহলি কিতাবকে বুঝানো হয়েছে যারা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রজা। অন্যদিকে দারুল হারব ও কুফার ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের মেয়েদের বিয়ে করা জায়েজ নয়। হানাফী ফকীহগণ এর থেকে সামান্য একটু ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের মতে বহির্দেশের আহলে কিতাবদের মেয়েদেরকে বিয়ে করা হারাম না হলেও মকরূহ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পক্ষান্তরে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব ও হাসান বসরীর মতে, আয়াতটির হুকুম সাধারণভাবে প্রযোজ্য। কাজেই এখানে জিম্মী ও অজিম্মীর মধ্যে পার্থক্য করার কোনো প্রয়োজন নেই। তারপর মুহসানাত শব্দের ব্যাপারেও ফকীহগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। হজরত উমরের (রা) মতে, এর অর্থ পবিত্র ও নিষ্কলূষ চরিত্রের অধিকারী মেয়েরা। মুহসানাত শব্দের এ অর্থ গ্রহণ করার কারণে তিনি আহ্লি কিতাবদের স্বেচ্ছাচারী মেয়েদের বিয়ে করাকে এ অনুমতির আওতার বাইরে রেখেছেন। হাসান, শাবী ও ইব্রাহীম নাখ্ঈ (রা) এ একই মত পোষণ করেন। হানাফী ফকীহগণও এ মত অবলম্বন করেছেন।

অন্যদিকে ইমাম শাফেঈর মতে, এখানে এ শব্দটি ক্রীতদাসীদের মোকাবিলায় ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এখানে এ শব্দটির অর্থ হচ্ছে, আহলি কিতাবদের এমন সব মেয়ে যারা ক্রীতদাসী নয়। 

আহলি কিতাবদের মেয়েদেরকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়ার পর এখানে সতর্কবাণী হিসেবে এ বাক্যটি সন্নিবেশিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তি এ অনুমতি থেকে লাভবান হতে চাইবে সে যেন নিজের ঈমান ও চরিত্রের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে। এমন যেন না হয়, কাফের স্ত্রীর প্রেমে আত্মহারা হয়ে অথবা তার আকীদা ও কর্মকান্ডে প্রভাবিত হয়ে তিনি নিজের ঈমানের মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে বসেন বা সামাজিক জীবন যাপন ও আচরণের ক্ষেত্রে ঈমান বিরোধী পথে এগিয়ে চলেন। 

এ ব্যাপারে আল-মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইসলামিক সায়েন্স সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ সালামাহ বলেন, যদি সে একজন পবিত্র নারী হয়, তাহলে আপনি তাকে বিয়ে করতে পারেন কারণ মুসলমানদের জন্য খ্রিষ্টান নারীদের বিয়ে করার অনুমতি রয়েছে। এই শর্তে যে, সেও মুসলিম হবে। প্রকৃতপক্ষে, এটি তার (খ্রিষ্টান নারীর) মুসলিম হওয়ার জন্য আপনার পক্ষ থেকে সাহায্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

সারকথা হলো, ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের বিয়ে করার ব্যাপারে ইসলামের দিক-নিদের্শনা হলো- মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো সম্ভব হলে বিয়ে করা বৈধ। একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারী থাকবে অন্যজন তার ধর্মের অনুসারী থাকবে এভাবে দাম্পত্যজীবন শুরু করাকে ইসলাম সমর্থন করে না।  

সূত্র : মুসলিমস্টোরিজ.টপ

প্রিয় ইসলাম/কামরুল