কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

রাজধানীর বড় বেড়াইদ এলাকায় ‘কলকাতা চা’ দোকানের সামনে ভোক্তারা। ছবি: প্রিয়.কম

ঢাকায় ‘কলকাতা চা’

প্রদীপ দাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:৩৮
আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:৩৮

(প্রিয়.কম) মহাসড়কে কিংবা এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া মেঠো পথে চা বিরতি; রাস্তার ধারের ছোট্ট খুপড়ির মতো দোকানঘর থেকে দোকানি মাটির কাপে চা এগিয়ে দিচ্ছেন। চারদিকে চোখ প্রসারিত করে কিংবা চোখ কুচকিয়ে প্রশান্তির ঢঙে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন অভিনেতা। ভারতীয় চলচ্চিত্র, নাটক যারা দেখেন তাদের চোখে এমন দৃশ্য হরহামেশাই পড়ে থাকবে। এমন দৃশ্য দেখে অনেকের মনে হয়ত নিজের অজান্তেই আকাঙ্ক্ষার জন্ম নেয় - ‘ইস্ এভাবে আমারও চা খাওয়ার সুযোগ হলে মন্দ হতো না।’

এমন আকাঙ্ক্ষা যেমন মনের অজান্তেই জন্ম নেয়, তেমনি মনের অজান্তেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মারা যায়। তবে এখন অনেকে চাইলে এমন আকাঙ্ক্ষার পূর্ণতা দিতে পারেন। রাজধানীর বড় বেড়াইদ এলাকার মো. আলমগীর হোসেন কলকাতায় দুই বছরের অধিক সময় থেকে শিখে এসেছেন কলকাতার চা বানানোর রেসিপি। এক বছর আগে নিজ এলাকায় এসে কলকাতার ঢঙেই চা তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি। কলকাতার ঢঙে চা তৈরি করায় বেড়াইদ ঘাটের কাছে রাস্তার ধারের দোকানের নামও রেখেছেন তিনি ‘কলকাতা চা’।

কলকাতা থেকে চলে আসলেও এখনো আলমগীর হোসেনকে মাঝেমধ্যেই সেখানে যেতে হয়। তাই কালকাতার থেকে আসার সময় প্রয়োজন মতো অল্প করে নিয়ে আসেন চায়ের কাপ। চায়ের কাপ নিয়ে আসা প্রসঙ্গে আলমগীর জানান, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে মাটির কাপের দাম অনেক কম। তার দোকানে কলকাতা থেকে আনা দুই ঘরানার চায়ের কাপ দেখা যায়। একটির দাম স্বল্প, প্রতি কাপের পেছনে তাকে খরচ করতে হয় ৮০ পয়সা, অন্য ছয়টির জন্য ২৩০ টাকা। 

চা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলমগীর হোসেন জানান, দুধ, ডিম, পাতিসহ যাবতীয় উপাদান এক সঙ্গে মিশিয়ে জ্বাল দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ চুলায় রাখার পর দুধ পানি ছেড়ে দেন। এরপর দুধসহ যাবতীয় উপাদান ঘন হলেই কেবল চা বিক্রি করেন না তিনি। প্রতি কাপ চা বিক্রি হয় ১০ টাকায়। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই চা পাওয়া যায়।

আলমগীর বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রতিদিন অনেকেই এখানে চা খেতে আসেন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ চা খেতে আসে। অনেকে ১০ টাকার চা খেতে ২০০ টাকার তেল ফুরায়।

‘কলকাতা চা’ খাচ্ছেন ভোক্তারা। ছবি : প্রিয়.কম

‘কলকাতা চা’ খাচ্ছেন ভোক্তারা। ছবি: প্রিয়.কম

এর সাক্ষাৎ-প্রমাণও দেখতে পান এই প্রতিবেদক। সম্প্রতি ওই দোকানে বসে থাকা অবস্থায়ই এক নারী গাড়ি থেকেই জিজ্ঞাসা করেন, ‘এখন চা হবে চাচা?’ দোকানি হ্যাঁ উত্তর দিলে তিনি সন্তানকে নিয়ে চায়ের দোকানে আসেন। দোকানির সঙ্গে ওই নারীর কথা শুনে বোঝা গেল, তিনি নিয়মিত চা খেতে আসেন এবং দোকানদারের সঙ্গে ভালো সম্পর্কও গড়ে উঠেছে।

মাঝেমধ্যে কলকাতা চা খেতে আসেন নাইম, অজয়, ইভা ও হাসান। তারা জানান, এই দোকানের চা খেতে ভালো লাগে তাই আসেন। তাছাড়া এখানকার পরিবেশে সময় কাটানোর মতো। বালু নদী, ফাঁকা জায়গা থাকায় কিছু সময়ের জন্য গাড়ির হর্ন, শহরের ঘিঞ্জি-দূষিত পরিবেশ থেকে অল্প হলেও মুক্তি মেলে।

শুধু চা-ই নয়, যারা ১০০ ফিটের বড় বেড়াইদ চা খেতে যাবেন তারা পাবেন কলকাতার ওই ফিল্মি আবহ-ই। কারণ রাজধানীর নতুন বাজার থেকে বড় বেড়াইদ পর্যন্ত যাওয়ার সময় খুব একটা বাড়িঘর চোখে পড়বে না। একটু পর পর পড়বে ব্রিজ, আর দুই পাশে বালু ভরাট করা ও ভরাট চলা ভূমি। বালু নদীর ধারের ওই দোকানে দাঁড়িয়ে চোখ প্রসারিত করে দেওয়া যাবে চায়ের কাপে চুমুক। বিকেলের দিকে আবার কলকাতা চা খেতে খেতে দেখা যায় রক্তিম সূর্যাস্ত। 

তবে এই আবহে কলকাতা চা খেতে হলে আকাঙ্ক্ষীদের সম্প্রতিক সময়েই যাওয়া ভালো। কারণ রাস্তার দুইপাশই আবাসন প্রকল্পের দখলে চলে গেছে। ওইসব ভূমিতে বালু ফেলে দ্রুত ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। একই গতিতে চলছে প্লট বা ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজও। এইসব বাসাবাড়ি গড়ে উঠলে কলকাতা চা খাওয়া সম্ভব হলেও রাস্তা দিয়ে আসার সেই রিদম ও চোখ প্রসারিত করা, কিংবা সূর্যাস্ত দেখা সম্ভব হবে না।

প্রিয় সংবাদ/আশরাফ