কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৌজন্যে

জ্বালানি সাশ্রয়ী উড়োজাহাজ যোগ হচ্ছে বিমানে

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:১২
আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:১২

(প্রিয়.কম) প্রথমবারের মতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক ৭৮৭-৮ মডেলের ড্রিমলাইনার নামে চারটি বোয়িং উড়োজাহাজ। এর মধ্যে চলতি বছরে দুটি ও ২০১৯ সালে আরও দুটি যোগ হবে। এগুলো অন্যান্য বিমানের চেয়ে ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শাকিল মেরাজ প্রিয়.কমকে বলেন, ‘নতুন যোগ হতে যাওয়া এসব উড়োজাহাজ তৈরির সময় কার্বন ফাইবার মেটারিয়াল ব্যবহার করা হয়েছে। এতে অন্যান্য উড়োজাহাজের তুলনায় এর বডির ওজন তুলনামূলক কম। এ কারণে এসব উড়োজাহাজ চলাচলে ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হবে।’

তিনি জানান, অত্যাধুনিক এসব উড়োজাহাজে থাকবে ওয়াইফাই সুবিধা, মুভি দেখা, মিউজিক ও বিশ্বের খ্যাতনামা টেলিভিশনের রিয়াল টাইম লাইভ স্ট্রিমিং দেখার সুবিধা। যাত্রীরা বিমানে বসেই প্রিয়জনের সঙ্গে কথাও বলতে পারবেন।

শাকিল মেরাজ জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৩টি বিমান দিয়ে ৭ টি অভ্যন্তরীণ ও ১৫ টি আন্তর্জাতিক রুটে সেবা দিচ্ছে। বিমানের বহরে রয়েছে নিজস্ব চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ও দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের নতুন উড়োজাহাজ। এ ছাড়াও রয়েছে লিজে আনা দুটি বোয়িং-৭৭৭-২০০ ইআর, দুটি বোয়িং-৭৩৭-৮০০ এবং দুটি ড্যাশ এইট উড়োজাহাজ। এখন এ বছরে ভ্রমণপ্রিয়াসুদের জন্য নামানো হচ্ছে ৭৮৭-৮ মডেলের ড্রিমলাইনার নামের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ। চারটি উড়োজাহাজের মধ্যে চলতি বছরের আগস্টে একটি এবং নভেম্বরে আসবে আরেকটি। এরপর বাকী দুটি আসবে ২০১৯ সালের মধ্যে।

বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করার পাশাপাশি বিমানের গুয়াংজু, কলোম্বো, মালে, সিডনি, টরেন্টো ও টোকিওতে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিমান বাংলাদেশ সূত্র আরও জানিয়েছে, স্টেট অব দ্যা আর্ট টেকনোলজির ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটিতে যাত্রীরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফিট উচ্চতায় ভ্রমণকালীন সময়েও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বিমানে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুবিধা থাকবে। একই সঙ্গে এ উড়োজাহাজে থাকছে বিশ্বমানের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম (আইএফই)। যেখানে যাত্রীদের জন্য ক্লাসিক থেকে ব্লকবাস্টার মুভি, শতাধিক মিউজিক শোনা ও ভিডিও দেখার সুবিধা। থাকবে ভিডিও গেমসসহ বিশ্বের খ্যাতনামা টিভি চ্যানেলের রিয়াল টাইম লাইভ স্ট্রিমিং। মন চাইলে ফ্রি-শুল্ক সুবিধায় যাত্রীরা অনলাইনে কেনাকাটার জন্য ফরমায়েশ করতে পারবেন। আর বাচ্চারা ভিডিও গেমস খেলে পুরো ভ্রমণের সময় কাটাতে পারবে উড়োজাহাজে বসে।

শতকরা ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী বিমানের নবতর সংযোজন ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজে থাকবে ২৭১টি আসন। এর মধ্যে ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস ও ২৪টি বিজনেস ক্লাস। বিজনেস ২৪টি আসন তৈরি করা হয়েছে বিশেষ পদ্ধতিতে। আসনের সুইচ চাপলেই দেখা যাবে, আসন ১৮০ ডিগ্রি বেঁকে গিয়ে পরিণত হয়েছে বড় বেডে (বিছানা)। যেখানে যাত্রী শুয়ে ও ঘুমিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। এ ছাড়াও উড়োজাহাজটির ককপিট থাকবে পেপারলেস। উড়োজাহাজটির পাইলটরা আইপ্যাড ব্যবহার করে সেটি পর্যবেক্ষণ করবেন। উড্ডয়নের পর ঢাকায় বিমানের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ থাকবে। কোনো কিছু হলে মনিটরের মাধ্যমে চালকরা তথ্য পাবেন। সার্বক্ষণিক এয়ারক্রাফটের সঙ্গে সার্ভার সংযোগ থাকবে। বিশ্বের যেখানেই উড়ুক না কেন, যে অবস্থায় থাকুক না কেন, চব্বিশ ঘণ্টা উড়োজাহাজের ইঞ্জিন মনিটরিং ও তার পারফরমেন্স অটো ডাউনলোড হবে। বিমানের কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হলে নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকেই পাইলটকে পরামর্শ দিতে পারবে এবং এই উড়োজাহাজ টানা ১৬ ঘণ্টা রি-ফুয়েলিং ছাড়া উড়তে পারে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শাকিল মেরাজ প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমরা যে উড়োজাহাজটি আনতে যাচ্ছি তা হবে ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী। উড়োজাহাজটির পাইলটরা আইপ্যাড ব্যবহার করে সেটি পর্যবেক্ষণ করবেন। উড়োজাহাজটি বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন তা ঢাকায় বিমানের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ থাকবে। আমরা খুবই আশাবাদী এর মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একটি নবযুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।’

তিনি জানান, হাইটেক এই উড়োজাহাজ পরিচালনার করার জন্য ইতোমধ্যে বিমানের টেকনিক্যাল মেকানিশিয়ানদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ১৪৭ জন ইঞ্জিনিয়ার বোয়িংয়ের ট্রেনিংয়ের জন্য সিঙ্গাপুরে যাবেন। সেখানে তারা কম্পিউটার বেজড ট্রেনিং নেবে।

উড়োজাহাজটিতে সার্বক্ষণিক ওয়াইফাইয়ের জন্য প্যানাসনিক কোম্পানির সঙ্গে বিমান বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। এটার টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে আমেরিকার লস এঞ্জেল থেকে। এ ছাড়াও সার্ভার ও ডাটা ব্যাকআপ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের হাইটেক পার্কে ফোর্থ টায়ারের ডাটা সেন্টারের সঙ্গে বিমান কর্তৃপক্ষ কথা বলছে বলেও জানান শাকিল মেরাজ।

প্রিয় সংবাদ/রিমন