কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রকৃতিকে কাছে থেকে উপভোগ করার জন্য ঘুরে আসুন চমৎকার এই রিসোর্ট।

পাহাড়ের কোলে শুকতারা রিসোর্টে

উম্মে মোনতেজামা
ফিচার রাইটার, ট্রাভেল
প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৩
আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৩

(প্রিয়.কম) বাংলাদেশের উওর-পূর্বে অবস্থিত প্রাচীন জনপদ সিলেট। গাঢ় নীল আকাশের সাথে সবুজ পাহাড়ের মিতালি, যতদূর চোখ যায় মখমলের মতো চা বাগান, আর পাহাড়ি নদীর স্বচ্ছ পানি ও জলপ্রপাতের দৃশ্য পর্যটকদের টেনে নিয়ে যায় বারবার। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি থাকাটাও যদি হয় আরামে তাহলে সব মিলিয়ে ভ্রমণ হয় চমৎকার। প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থাকার চমৎকার এই সুযোগ করে দিয়েছে শুকতারা রিসোর্ট। 


স্থাপত্য কৌশলের সাথে বুনো লতাপাতা ঘিরে রেখেছে রিসোর্টকে। 

প্রকৃতির মাঝে আধুনিকতার এক অসাধারন সমন্বয় সাদামাটা রিসোর্টটি। সিলেট থেকে পর্যটন কেন্দ্র জাফলং যাওয়ার পথে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বেই চোখে পড়বে। সিলেটের শাহপরান মাজারের অনেক কাছেই খাদিমনগরে এর অবস্থান। ওই এলাকায় খাদিম জাতীয় উদ্যানে টিলার একদম চূড়ায় ১৪ একর জায়গাজুড়ে এই রিসোর্ট। টিলার ভাঁজে গড়ে তোলা হয়েছে একেকটি কটেজ। টিলার একপাশে দেখতে পাবেন খাদিম আর বরজানের চা বাগান, দৃষ্টিসীমা আটকে দেয়া খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়। অন্যদিকটায় সুরমার জলধারা আর দিন-রাত পাহাড়ের বাঁকে উঁকি মেরে জ্বলে চলা আলুটিলা গ্যাসফিল্ডের মশাল। স্থাপত্যের কৌশলে সবুজে ঘেরা বুনো লতাপাতায় জড়ানো রিসোর্টটিই দেশের প্রথম প্রকৃতি নিবাস


এই রিসোর্টে পাবেন সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। 

সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়কে শাহপরানের মাজার ছেড়ে একটু সামনে বামে ছোট সড়কে মোড় নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এগোলেই শুকতারার দুয়ার। এখানে পাহাড়ের পায়ের কাছে গিয়ে আপনাকে গাড়ি ছেড়ে উপরে উঠতে হবে। উপরে গাড়ি ওঠানোর অনুমতি নেই। সমতল থেকে প্রায় ৫০ ফুট উঁচুতে যাওয়ার জন্য রয়েছে কয়েক ধাপের সিঁড়ি। এ পথে না উঠতে চাইলে ভয়ের কিছু নেই। অন্যপাশে রয়েছে টয় ট্রেন লাইন। শুকতারার ট্রেনে করে সুউচ্চ টিলার গা বেয়ে সোজা পৌঁছে যাবেন অভ্যর্থনা গৃহের সামনে। রিসোর্টে মোট ১১টি কটেজ। পাহাড়ের গাছের আড়ালে চারতলাবিশিষ্ট এ বাড়িটির তৃতীয় তলায় রয়েছে সাজানো গোছানো অভ্যর্থনা কক্ষ আর লাউঞ্জ। পাশেই পাঠাগার। এর এক ছাদ নিচেই রেস্তোরাঁ একাশিয়া। ভিন্ন এক পরিবেশে অসাধারণ সব সুস্বাদু  খাবার এখানে। তার পাশেই সভাকক্ষ। একেবারে নিচের তলায় আছে ছোট একটি হোম থিয়েটার। সভা-সেমিনার-কর্মশালা ও পার্টি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে টিলার চূড়ায়। আর বারবিকিউ পার্টির জন্য তৈরি করা হয়েছে ছাদযুক্ত খোলা কক্ষ। 


চারপাশে কাঁচের দেয়াল থাকায় ঘরে বসেই দেখতে পারবেন পাহাড়ের সৌন্দর্য।  

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ আর ২৪ ঘণ্টা সৌরচালিত গিজারের ব্যবস্থাও আছে কটেজে। বাগানের তাজা ও সতেজ চা-কফি তাই নিজ হাতেই তৈরি করতে পারবেন। শুকতারার আতিথেয়তার আরেক নিদর্শন, এখানকার কর্মচারীদের সবাই স্থানীয়। ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও মনিপুরি সহ চা শ্রমিকদের ছেলে মেয়ে। শুকতারার কটেজগুলোর ভেতরের সৌন্দর্য বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। প্রতিটি কক্ষের ছাদ পর্যন্ত কাঁচের দেয়াল। প্রতিটি ঘরের সঙ্গেই লাগোয়া বারান্দা। ঘরে বসেই পাহাড়ের সৌন্দর্যকে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারবেন সহজেই। এর স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলী এমন যাতে প্রকৃতির গায়ে একটুও আঁচড় পড়েনি। বিদ্যুৎ আর শীতাতপ ব্যবস্থা ছাড়া বাকি সবই প্রকৃতি নির্ভর। শুকতারায় আগত পর্যটকদের জন্য রিসোর্টে গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে, যারা সিলেটের বিভিন্ন চা বাগান, লালাখাল, পিয়াইন নদী, সারি নদী, জৈন্তাপুর রাজবাড়ি, তামাবিল-ডাউকি সীমান্ত, মাধবকুণ্ড-জলপ্রপাত, জাফলং সহ অন্যান্য জায়গা ঘুরিয়ে দেখাবেন। 

যেভাবে যাবেনঃ
সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেটে যাওয়া যায়। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকেও যেতে পারবেন। ঢাকার কমলাপুর থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত, দুপুর ২টায় জয়ন্তিকা এবং বুধবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১০টায় উপবন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া প্রথম শ্রেণী চেয়ার ২৭০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮০ টাকা। এছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে গ্রীনলাইন, সৌদিয়া, এস আলমসহ বেশ কিছু পরিবহনের বাস যায় সিলেটে। এসি বাসের ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা এবং নন-এসি বাস ভাড়া নিবে ৩০০-৫০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টায় উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটে যায়। প্রথম শ্রেণী ৩২০ টাকা এবং শোভন চেয়ার ২১০ টাকা ভাড়া। এছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ও রিজেন্ট এয়ারের বিমান নিয়মিত উড়াল দেয় সিলেটের আকাশে। 

সিলেট শহর থেকে সিএনজি চালিত বেবি ট্যাক্সি বা অটো রিকশায় শুকতারা আসতে ভাড়া লাগবে ১৫০-২০০ টাকা।

ভাড়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
শুকতারায় বড় স্যুইট ৬,৫০০ টাকা, সেমি স্যুইট ৫৫০০ টাকা এবং ফ্যামিলি স্যুইট ৫০০০ টাকা। বিভিন্ন দিবসে দশ শতাংশ ছাড়ও দেয়া হয়। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন ০৮২১-২৮৭০৯৯৪-৫ ও ০১৭৬৪৫৪৩৫৩৫ নম্বরে। অথবা ভিজিট করুন তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.shuktararesort.com

সম্পাদনাঃ ড. জিনিয়া রহমান

প্রিয় ট্রাভেল সম্পর্কে আমাদের লেখা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে। যে কোনো তথ্য জানতে মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো লেখা পাঠাতে ক্লিক করুন এই লিংকে-https://www.priyo.com/post