কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আরবিতে আল্লাহু লেখা ক্যালিগ্রাফি। ছবি : সংগৃহীত

আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:৫১
আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:৫১

(প্রিয়.কম) আমরা মহান আল্লাহপাকের ইবাদত করি, তার আদেশ পালন করি। কিন্তু আমরা কখনো তাকে দেখতে পাই না। কিন্তু কেন আমরা তাকে দেখতে পাই না? আল্লাহ মহানকে না দেখেও যারা বিশ্বাস করে, তারাই প্রকৃত মুমিন এবং তারাই মুত্তাকী।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, `এটি হিদায়াত সেই মুত্তাকীদের জন্য যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে। নামাজ কায়েম করে এবং যে রিজিক আমি তাদেরকে দিয়েছি, তা থেকে খরচ করে। আর যে কিতাব তোমাদের ওপর নাজিল করা হয়েছে (অর্থাৎ কুরআন) এবং তোমার আগে যেসব কিতাব নাজিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ওপর ইমান আনে আর আখেরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে। এ ধরনের লোকেরা তাদের রবের পক্ষ থেকে সরল সত্য পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারা কল্যাণ লাভের অধিকারী।' (সূরা-বাকারা, আয়াত: ২-৫)

মহান আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করা এবং তার ইবাদাত করা মুমিন বান্দার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা ও ইবাদাত করা ছাড়াও আরো কিছু বিষয়ে মুমিন বান্দার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 

এক. এ দুনিয়ায় মানুষ কোনো দায়িত্বহীন জীব নয়, বরং নিজের সব কাজের জন্য তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতা করতে হবে।

দুই. দুনিয়ার বর্তমান ব্যবস্থা চিরন্তন নয়। এক সময় এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং সে সময়টা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

তিন. এ দুনিয়া শেষ হওয়ার পর আল্লাহ আর একটি দুনিয়া তৈরি করবেন। সৃষ্টির আদি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষের জন্ম হয়েছে সবাইকে সেখানে একই সঙ্গে পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। সবাইকে একত্র করে তাদের কর্মকাণ্ডের হিসাব নেবেন। সবাইকে তার কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন।

চার. আল্লাহর এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সৎ লোকজন জান্নাতে স্থান পাবে এবং অসৎ লোকদের নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে।

এ সমগ্র আকিদা-বিশ্বাসগুলোকে যারা মনে প্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি, তারা কুরআন থেকে কোনোক্রমেই উপকৃত হতে পারবে না। কারণ এ বিষয়গুলো অস্বীকার করা তো দূরের কথা, এগুলো সম্পর্কে কারো মনে যদি সামান্যতম দ্বিধা ও সন্দেহ থেকে থাকলে তাকে ইমানদার বা মুমিন বান্দা হিসেবে ইসলাম স্বীকৃতি দেবে না।

আল্লাহকে না দেখে তার ইবাদাত করেছেন সবাই। সব নবী-রাসূল থেকে শুরু করে জামানার অলি-আউলিয়াসহ সব মুমিন বান্দারাই এমনটা করেছেন। অনেকেই বিভিন্ন সময় আল্লাহকে দেখতে চাওয়ার আবদার করেছেন। কিন্তু তাদের সেই আবদার পূরণ হয়নি। কারণ এটাই আল্লাহর বিধান। তাকে না দেখে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং তার বিধান মেনে চলতে হবে। 

হজরত মুসা (আ.) আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার সে আবদার পূরণ হয়নি। পবিত্র কুরআনের এক আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, ‘অতঃপর মুসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন, তখন সে আকুল আবেদন জানালো, হে প্রভু! আমাকে দর্শনের শক্তি দাও, আমি তোমাকে দেখবো। তিনি বললেন, তুমি আমাকে দেখতে পারো না। সামনের পাহাড়ের দিকে তাকাও। সেটি যদি নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্য তুমি আমাকে দেখতে পাবে। কাজেই তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেল। সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে মুসা বলল, পাক-পবিত্র তোমার সত্তা। আমি তোমার কাছে তওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম মুমিন।’ (সূরা-আল আরাফ, আয়াত: ১৪৩)

এই আয়াতে মূলত মুসা (আ.) আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি দেখতে পারেননি। অর্থাৎ আল্লাহকে দেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হতো তাহলে মুসা (আ.) অবশ্যই আল্লাহকে দেখতে পাতেন।

আল্লাহকে না দেখতে চেয়ে তার প্রতি বিশ্বাস রেখে ইবাদাত পালনে অভ্যস্ত হওয়া উচিত এবং এটাতেই মুমিন বান্দার সাফল্য নিয়োজিত। এ ছাড়া আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেছেন, ‘এ তো আমার অনুগ্রহ। আমি বনী আদমকে মর্যাদা দিয়েছি এবং তাদের জলে-স্থলে সওয়ারি দান করেছি, তাদের পাক-পবিত্র জিনিস থেকে রিজিক দিয়েছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাদের সুস্পষ্ট প্রাধান্য দিয়েছি।’ (সুরা-বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭০) 

সুতরাং একজন মুমিন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত আল্লাহকে না দেখে বা তাকে দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তার ইবাদতে মশগুল হওয়া।