কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও জ্বলে উঠেছিলেন ওপেনার সৌম্য সরকার। ছবি: সংগৃহীত

অভিশপ্ত দুঃস্মৃতিতে ৭-০ বাংলাদেশ

সামিউল ইসলাম শোভন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০১৭, ২২:১০
আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭, ২২:১০

(প্রিয়.কম) আরও একটি হার। প্রথম টি-টোয়েন্টির পর দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে আরও বিধ্বস্ত বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ২২৫ রানের লক্ষ্য জয় করতে নেমে ১৪১ রান করতেই হারাতে হল সবকটি উইকেট। ব্যাট হাতে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের তাড়াহুড়ো দেখে মনে হচ্ছিল, যেন একটু পরই দেশের বিমান ধরতে হবে। সঙ্গে, সাত ম্যাচের সবকটিতেই হারের অভিশপ্ত দুঃস্মৃতি ‘স্যুভেনির’ হিসেবে বয়ে নিয়ে যেতে হবে।

ব্লুমফন্টেইনে হারলেও অনেকখানি প্রতিরোধ গড়তে পেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পচেফস্ট্রুমে ৮৩ রানে হারের দিন নিতান্তই পাড়ার দল বনে গেল সাকিবের দল। লজ্জার নয়া রেকর্ডও গড়ল সাকিবের নেতৃত্বে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০৮ সালে করাচিতে ১০২ রানের ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ, যা কিনা রানের দিক থেকে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হার। তারপরই দুঃস্বপ্নের পরিসংখ্যানে উঠে এল পচেফস্ট্রুমের নাম।

আগের ম্যাচে জ্বলে ওঠা ওপেনার সৌম্য সরকার এই ম্যাচেও ঝড় তুলেছিলেন (৪৪)। সেটা অবশ্য একবার জীবন পেয়ে। প্রোটিয়া অধিনায়ক জেপি ডুমিনির বলে ক্যাচ তুলেছিলেন ফ্রাইলিঙ্কের হাতে। কিন্তু তাতে কি, একা আর কতই বা পেরে ওঠা যায়! অপর প্রান্তে যখন উইকেট হারানোর ‘মড়ক’ শুরু হয়েছে, তখন সৌম্যও ধৈর্য্য ধরতে পারেননি। ফিরেছেন অ্যারন ফাঙ্গিসোর বলে। তারপরও দলের পক্ষে এই ম্যাচেও তিনিই সর্বোচ্চ রানের মালিক।

তাল হারিয়ে ফেলা ওপেনার ইমরুল কায়েস এ দফায়ও ব্যর্থ হলেন। প্রথম ম্যাচে ১০ রানের পর এই ম্যাচে পেলেন মাত্র ছয় রান। তাতে করে দলে নিজের জায়গার ভিত থেকে আরও খানিক মাটি ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দলের একমাত্র টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট সাব্বির রহমানকে হটিয়ে অধিনায়ক হওয়ার প্রথম ম্যাচেই নিজের প্রিয় পজিশন তিন নম্বরে ব্যাট করেছেন সাকিব আল হাসান। তাতে খুব একটা সুবিধা হয়নি। ব্লুমফন্টেইনে ১৩ রান করেছিলেন, এই ম্যাচে দুই রান। শুধু অধিনায়ক হিসেবেই নয়, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়ে রোববারের ম্যাচে তার আউট হওয়াটা যে কারও কাছেই ছিল দৃষ্টিকটু। অন্যদিকে, তিন নম্বরের নিয়মিত ব্যাটসম্যান সাব্বির এই ম্যাচে নামলেন পাঁচে, রানও পেয়েছেন পাঁচ। এপাশ-ওপাশ; দুপাশেই যখন আসা যাওয়ার মিছিল, তখন খানিকটা সুখের পরশ দিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিকুর রহিমের (২) পর ২০ বলে ২৪ রানের ইনিংস খেলেছেন দলের এই বোলিং অলরাউন্ডার।

জ্যেষ্ঠ ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা এই ম্যাচেও খানিকটা ঘোচানোর চেষ্টা করলেন সাইফুদ্দিন-মিরাজ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩১ রানের জুটি গড়া এই দুই ব্যাটসম্যান মিলে রোববার গড়েছেন ৩২ জুটি। মূলত, তাদের ব্যাটেই শতরানের ব্যবধানে হারের ফাঁড়া কাটিয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজ এদিন ১৩ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়া ব্যাটসম্যান লিটন দাসের (৯) মতই ‘ব্যাট হাতে নামার’ দায়িত্ব পালন করেছেন বোলার তাসকিন আহমেদ (৪), রুবেল হোসেন (১*)। তাতে করে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত দলের ঢাল হয়ে দাঁড়ানো সাইফুদ্দিন (২৩) খুব একটা সুবিধা পাননি। এই সাইফুদ্দিনকে ফিরিয়েই বেউরান হেনড্রিক্স বাংলাদেশের ম্যাচের ইতি টানেন। বল হাতে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন অধিনায়ক ডুমিনি ও ফাঙ্গিসো।

এর আগে টসে হেরে আগে ব্যাট শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওপেনার হাশিম আমলার ৮৫ রান ও ডেভিড মিলারের অপরাজিত ঝড়ো ১০১ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ২২৪ রান তোলে জেপি ডুমিনির দল। বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাইফুদ্দিন ও অধিনায়ক সাকিব।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সফর করেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু ঘরের মাঠের সফলতা প্রোটিয়া কন্ডিশনে যেন মুদ্রার ওপিঠ দেখল। বাজে ইতিহাস বদলানোর যে প্রত্যয় নিয়ে শুরু করেছিলেন মুশফিকুর রহিম-মাশরাফি বিন মুর্তজা-সাকিব আল হাসানরা, তাতে সফলতার কানাকড়িও মেলেনি। দুই টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে আর সর্বশেষ দুটি টি-টোয়েন্টির; সবগুলিতেই শুধু হারের স্বাদই নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হার, ওয়ানডেতে ১০ উইকেটের হারের পর টি-টোয়েন্টিতে খানিকটা আভাস মিলেছিল জয়ের। সেই উৎসাহের আগুনে জল ঢেলে নিজেদের সফলতা ধারাবাহিক করেছে জেপি ডুমিনির দক্ষিণ আফ্রিকা। 

দিন শেষে তাই সব হারিয়েই দেশের বিমান ধরতে হবে বাংলাদেশকে। মনোবল ফিরিয়ে শুরু করতে হবে নতুন কোন জয়গাঁথা লেখার মিশন।