মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা। ফাইল ছবি
রোহিঙ্গাদের খাদ্য-আবাসনের সুযোগ বাড়াবে বাংলাদেশ
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:১৭
(প্রিয়.কম) গত ১১ আগস্টে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েনের পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ ছাড়া ফের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামবে বলেও আশঙ্কা করছেন জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ দফতর।
জাতিসংঘের এমন আশঙ্কার প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের খাদ্য এবং আবাসনের সুযোগ আরও বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রতিদিনই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শরণার্থীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। আর নতুন করে বড় আকারে রোহিঙ্গা প্রবেশের ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে ৮৪ হাজার পরিবারের থাকার বিষয়ে পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের পরিকল্পনায় আছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার পরিবার। জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএফপির সাথেও ৮ লাখ মানুষকে টার্গেট করেই খাদ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও আমরা আগের চেয়ে একটু বাড়িয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’
তবে নতুন করে যদি বড় আকারে রোহিঙ্গা আসতে শুরু করে তবে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে সামাল দেয়ার মত প্রস্তুতি বাংলাদেশের নেই বলে মনে করছেন দুর্যোগ প্রস্তুতি বিষয়ক সংগঠনগুলোর জোট ডিজাস্টার ফোরামের সদস্য সচিব নাঈম ওয়াহারা। তিনি বলেন, যে ছয় মাসের পরিকল্পনা রয়েছে সেটিও অপ্রতুল।
নাঈম ওয়াহারা বলেন, ‘অনেক বিষয় ভাবা হয়নি। যেমন বড় সাইক্লোন হলে এই ঘরগুলো টিকবে না, সেটির কোন পরিকল্পনা আছে কিনা আমরা জানি না। শীত আসছে, সেটাও আমাদের মনে রাখতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে খাবার এবং থাকার জায়গার বিষয়ে পরিকল্পনা হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য বিষয় সেরকমভাবে বিবেচনায় রাখা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, এক মাসের মাথায় আরেকটা বৈঠক করে পরিকল্পনাটি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। আরো শরণার্থীর জন্য প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট কতটা সমাধানের দিকে যাচ্ছে সেটিও বিবেচনা করে পরিকল্পনা করতে হবে।
এদিকে টেকনাফে বিজিবির কমান্ডিং অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দুদিন বিরতির পর গতকালও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রায় ৫০০ জন রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছেন। নতুন আসা রোহিঙ্গারাও বলছেন সীমান্তের ওপারে তাদের বাংলাদেশে আসার জন্য বলা হচ্ছে এবং সীমান্তে এখনো অনেকে অপেক্ষা করছেন। নৌকা কম থাকায় অনেকে আসতে পারছে না বলে ধারণা করছে বিজিবি।’
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি।
এদিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলার সময় এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মুখপাত্র। সারা বিশ্বে ইউএনএইচসিআর কতৃক নিবন্ধিত ১৭.২ মিলিয়ন শরণার্থীর ৩০% এখন বাংলাদেশে।
এরই মধ্যে চলমান রোহিঙ্গা ঢল অব্যাহত থাকলে শরণার্থীর এ সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে বলেও সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইচ ওয়াচের।
স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২১৪টি রোহিঙ্গা অধুষ্যিত গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে উল্লেখ করে দেশটির ওপর কিছু ক্ষেত্রে ও সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
গত ১১ আগস্টে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েনের পর চলমান রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি প্যাট্রিক মার্ফি।
আর রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ জোরদারে বৃটেনের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
প্রিয় সংবাদ/আশরাফ