কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

পুরো সিরিজ জুড়ে ছিল এমন দৃশ্য। যা চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। ছবি: এএফপি

করুণ হারে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় বাংলাদেশ

শান্ত মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৩১
আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৩১

(প্রিয়.কম) হোয়াইটওয়াশ শব্দটা আড়ালেই চলে গিয়েছিল। ২০১৪ সালে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর অনেক রাঘব বোয়াল শিকার করেছে মাশরাফিবাহিনী। দুই বছর পর চলতি বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। কিউইদের বিপক্ষে লড়াই করে হারায় হোয়াইটওয়াশ শব্দটা সেভাবে সামনে আসেনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে শুধু হোয়াইটওয়াশই নয়, রীতিমতো লজ্জা সঙ্গী হল বাংলাদেশের।

টেস্টের পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও সামান্যতম লড়াই করতে পারল না বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ১০ উইকেটের বিশাল হার। যা ছিল বাংলাদেশের প্রথম অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয় ওয়ানডে ১০৪ রানের হার। দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে সিরিজ খোয়ানোয় তৃতীয় ম্যাচটি পরিণত হয় নিয়ম রক্ষার। কিন্তু এই ম্যাচেই বড় লজ্জা মিলল। তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ২০০ রানের বিশাল হারের পাশাপাশি হোয়াইটওয়াশের লজ্জাও সঙ্গী হল বাংলাদেশের। ওয়ানডেতে রানের হিসাবে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ হার। 

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বড় দলগুলোও ভোগে, ম্যাচ হারে। এসব সবারই জানা। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ৫-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল অস্ট্রেলিয়াও। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতের পারফরম্যান্সও সবার জানা। সর্বশেষ ২৫ বছরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে মাত্র দুটি টেস্ট জিতেছে ভারত। সেখানে বাংলাদেশের হার নিশ্চয়ই অবাক করার মতো বিষয় নয়। কিন্তু এমন হার অবাক করার মতোই। পুরো সিরিজে এখন পর্যন্ত অসহায় বাংলাদেশ। কোনও ম্যাচেই লড়াকু বাংলাদেশকে দেখা যায়নি।  

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আর যাই হোক টস ভাগ্য বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। কিন্তু রোববার ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে টস জিতলেন ফাফ ডু প্রেসি। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্লেসি, ডি কক ও মার্করামের ব্যাটে ছয় উইকেটে ৩৬৯ রানের পাহাড় গড়ে স্বাগতিকরা। জবাবে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ কোনও মতে ১৫০ রানের রানের সীমানা পাড়ি দেয়। ১৬৯ রানেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস। 

লক্ষ্য যখন ৩৭০ রান, শুরুটা হওয়া চাই দাপুটে। কিন্তু দাপুটে তো দূরে থাক, স্বাভাবিক শুরুই করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলীয় তিন রানেই নেই ওপেনার ইমরুল কায়েস। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই দলকে অথৈ সাগরে ফেলে দেন লিটন কুমার দাস। দেখেশুনে খেলতে থাকা সৌম্য সরকারও ব্যর্থ হলেন। ২০ রানেই নেই তিন উইকেট।

বড় হার চোখ রাঙাতে শুরু করে তখনই। দলীয় ৫১ রানের মাথায় মুশফিকুর রহিমের বিদায়ে সেই শঙ্কা আরও পেয়ে বসে। ১০ রান পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিদায়ে বড় হার নিশ্চিত হয়ে যায় মাশরাফিবাহিনীর। কিন্তু একপাশে তখনও অভিজ্ঞতার জানান দিচ্ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাব্বির রহমানকে নিয়ে এগোতে থাকেন সাকিব।

হার বাঁচানো সম্ভব না হলেও তাদের জুটি ব্যবধান কমানোর অস্ত্র হিসেবে কাজ করছিল। কিন্তু সাকিব-সাব্বিরের পথটা দীর্ঘ হয়নি। ৬৭ রানের জুটি গড়ে খেই হারান সাকিব। আগের বলে জীবন ফিরে পেয়েও পরের বলে একই শট খেলে নিজের উইকেটটি বিলিয়ে দিয়ে আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৬৩ রান।

সঙ্গীকে হারিয়ে সাব্বিরও দিকহারা। অভিষিক্ত মার্করামের বলে ক্যাচ তুলে দিলেন প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে। ৩৯ রান করা সাব্বির ফিরে গেলে বড় হার কাছেই দেখতে পাচ্ছিল বাংলাদেশ। মাঝে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা (১৭), মেহেদী হাসান মিরাজদের (১৫) লড়াই বড় হারকে ছোট করার চেষ্টা করেছে মাত্র।    

এর আগে ব্যাট করতে নেমে বরাবরের মতোই দাপুটে শুরু করেছে প্রোটিয়ারা। হাশিম আমলাকে বিশ্রাম দেওয়ায় কুইন্টন ডি ককের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন তেম্বা বাভুমা। স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এলেও শাসনের স্টাইলে পরিবর্তন আসেনি। শুরু থেকেই বাংলাদেশ বোলারদের শাসন করে খেলতে থাকেন  ডি কক ও বাভুমা। উদ্বোধনী জুটিতেই ১১৯ রান যোগ করেন এ দুজন।

ডি ককের মতো হাফ সেঞ্চুরির পথে ছিলেন বাভুমাও। কিন্তু ১৭.৫ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লং অনে ক্যাচ তুলে দেন ৪৮ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। বাভুমাকে হারিয়ে কিছুটা ছন্দপতনই হয় দক্ষিণ আফ্রিকার শিবিরে। ২২ তম ওভারে ৭৩ রান করা ডি কককেও সাজঘর দেখিয়ে দেন মিরাজ। দারুণ শুরুর পর হঠাৎই দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। 

যদিও সেটা ছিল সাময়িক। কারণ দলকে চাপ বুঝতেই দেননি অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি ও অভিষিক্ত এইডেন মার্করাম। বাংলাদেশের বোলারদের পাড়ার বোলারে পরিণত করে তৃতীয় উইকেটে ১৫১ রানের বিশাল জুটি গড়ে তোলেন এ দুজন। এ সময় প্লেসি ও মার্করাম দুজনই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ৬৭ বলে ১০ চার ও এক ছয়ে ৯১ রান করেন প্লেসি। সেঞ্চুরিও পূরণ করতে পারতেন। কিন্তু চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। 

দুর্ভাগ্যবশত রান আউট হয়ে থামেন অভিষেক ওয়ানডেতে ৬০ বলে চার চার ও দুই ছয়ে ৬৬ রানের ইনিংস খেলা মার্করামও। এদিন এবি ডি ভিলিয়ার্স বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২০ রান করেই থেমেছেন। শেষের দিকে ফারহান বেহারডিয়েনের ৩৩ ও কাগিসো রাবাদার ১১ বলের ঝড়ো ২৩ রানের সুবাদে ছয় উইকেটে ৩৬৯ রানের বিশাল স্কোর গড়ে প্রোটিয়ারা। 

আগের দুই ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন নির্বিষ। মিরাজ, তাসকিনরা দুটি করে উইকেট পেলেও সেসব কোনও কাজেই আসেনি। তার আগেই রান পাহাড় গড়ে নেন স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা। পুরো ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের বোলারদের শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়েছে ডি কক, হাশিম আমলা, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ফাফ ডু প্লেসিদের ব্যাটিং। অন্যদিকে মুশফিক ছাড়া কেউই ব্যাট হাতে জবাব দিতে পারেননি। 

কতটা ধারাবাহিক হওয়া সম্ভব সেটা প্রোটিয়াদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। প্রথম ওয়ানডেতে ১৬৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলা ডি কক দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও করেন ৪৬ রান। শেষ ওয়ানডেতে এসে করলেন ৭৩ রান। হাশিম আমলাও রান করেছেন নিয়মিত ধারায়। প্রথম ওয়ানডেতে ১১০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা ডানহাতি এই ওপেনার দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ৮৫ রান। 

এমন সব ইনিংস দেখেও নিজেদের মধ্যে বড় ইনিংস খেলার শক্তি আনতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। কেবলই যোগ দিয়েছেন আসা যাওয়ার মিছিলে। আর মেনে নিয়েছেন বিশাল বিশাল সব হার। যে হারের শুরু টেস্ট সিরিজ থেকে। টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত টানা পাঁচ ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। বাকি থাকা দুই টি-টোয়েন্টিতেও এভাবে হারবে না বাংলাদেশ, সেটাও আর বলার রাস্তা খোলা নেই!