মুস্তাফিজের মুখে কিছুটা হাসি থাকলেও প্রথম ইনিংসের পর এমন হতাশাতেই সময় কেটেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। ছবি: প্রিয়.কম
আত্মহত্যার মিছিলে সিরিজ ড্রয়ের সান্ত্বনা
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৫৯
(প্রিয়.কম) দার্জিলিংয়ের আকাশই বলতে হবে। এই রোদ তো, এই বৃষ্টি। চরিত্র বদলাতে এতটুকু সময়ও লাগে না। বাংলাদেশের দুটি ইনিংস দেখার পর দার্জিলিংয়ের আকাশের কথা মনে পড়াটা খুব স্বাভাবিক। প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রান করা দলটিই কি না দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৫৭ রানে অলআউট। চলেছে আত্মহত্যার মিছিল। তাতে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য মাত্র ৮৬ রান। যা সহজেই তুলে নিল অজিরা।
জেগে ওঠা সিরিজ জয়ের স্বপ্নের অপমৃত্যর সাক্ষী হয়ে থাকল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। প্রথম টেস্টে ২০ রানের জয় তুলে নিয়ে ইতিহাসই গড়েছিল বাংলাদেশ। পরাশক্তি অজিদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়! সেটাও মাত্র সাড়ে তিন দিনে। সেই ইতিহাসে আরো কয়েকটি পাতা যোগ করতে চেয়েছিলেন মুশফিক, সাকিব, তামিমরা।
কিন্তু এ যাত্রায় একটি ইনিংসের অপমৃত্যুতে সে পথে হাঁটা হল না। চট্টগ্রাম টেস্টে মেনে নিতে হল সাত উইকেটের হার। অথচ প্রথম ইনিংসে তিনশ পেরনো ইনিংস নিয়ে রঙিন স্বপ্নই দেখছিল মুশফিকবাহিনী। স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখা অসম্ভবও ছিল না। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ৩৭৭ রান করলে ৭২ রানে পিছিয়ে পড়লেও দ্বিতীয় ইনিংস দিয়ে পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ ছিল।
কিন্তু এক নাথান লায়নেই সব শেষ। যেন সাকিব আল হাসানের কথাই মনে করিয়ে দিলেন এই অজি স্পিনার। প্রথম টেস্টে ব্যাটে-বলে রাজত্ব দেখিয়েছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ৮৯ রান করার পাশাপাশি দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। চট্টগ্রাম টেস্টে সাকিবকেও ছাড়িয়ে গেছেন ম্যাচসেরা লায়ন। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার শিকার ১৩ উইকেট। এরমধ্যে প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন সাত উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসেও লায়নকে সামলাতে পারেননি তামিম, ইমরুল, সাকিব, সাব্বির, মুমিনুলরা। এই ইনিংসেও ছয় উইকেট বোগলদাবা করেছেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার কথাও বলতে হবে। আত্মহত্যার মিছিলে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস থেকে শুরু করে সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিমের আউটের ধরণই তার বড় প্রমাণ।
৮৬ রানের মামুলি লক্ষ্য নিয়েই লড়ার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এমন লক্ষ্য পেয়ে নির্ভার শুরুই করেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ম্যাট রেনশ। আগের ইনিংসে ১২৩ রান করা ওয়ার্নার তো রীতিমতো চড়ে বসতে চাইলেন। যদিও মুস্তাফিজুর রহমানের বাধায় সেটা করতে পারেননি বাঁ-হাতি এই অজি ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসে মতো মুস্তাফিজের দেওয়া বাউন্সারে দিক হারিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওয়ার্নার।
এরপর ওয়ার্নারের ভূমিকায় নাম লেখান রেনশ। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে সাথে পেয়ে সাকিবকে চার-ছয় মারতে শুরু করেন। ছোট হতে থাকে তাদের লক্ষ্য। যদিও স্মিথ বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৬ রান করে তাইজুল ইসালামের শিকারে পরিণত হতে হয় তাকে। ২২ রান করা রেনশকে ফেরান সাকিব। উইকেটে আসেন স্ট্রোক মেকার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। পিটার হ্যান্ডসকম্বকে সাথে নিয়ে মারকুটে মেজাজে খেলতে থাকেন ২৫ রানে অরপরাজিত থাকা ম্যাক্সওয়েল। এদের ব্যাটে সাত উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অজিরা।
প্রথম ইনিংসেও দিক হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিক, সাব্বির, নাসিররা ব্যাট হাতে দলকে পথ দেখিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও এমন কারো খোঁজে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মেলেনি। এই ইনিংসের সর্বোচ্চ রানই যে ৩১। অধিনায়ক মুশফিকের ব্যাট থেকে এসেছে এই রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুমিনুলের করা ২৯। এরপর ২৪ রান করা সাব্বির। বাকি ব্যাটসম্যানরা ২০ রানের কোটাও পার করতে পারেননি।
আফসোস বাড়ানো এক হারই। এখন মনে হতে পারে, আর ৫০-৬০ রান হলেই হয়তো সিরিজ জেতা সম্ভব ছিল। কে জানে হয়তো সম্ভব হতো। প্রথম ইনিংসে করা ৩০৫ রান কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া ৭২ রানে এগিয়ে গেলেও দুশ্চিন্তা ছিল না। সেটা দ্বিতীয় ইনিংসের ভরসাতেই। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যর্থতা শুধু জয় বঞ্চিতই করল না, উপহার দিল রাজ্যের হতাশা।
তবুও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজটা বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক, ইতিহাস রচনার। এতদিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে লড়াই করাটাই ছিল বাংলাদেশের একমাত্র চ্যালেঞ্জ। এই সিরিজের আগে অজিদের বিপক্ষে খেলা চার টেস্ট সেটারই সাক্ষ্য দেয়।
এবার সেই বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। উড়িয়েছে বিজয় কেতন। প্রথমবারের মতো অজিদের বিপক্ষে সিরিজ ড্র। এও তো কম নয়! বাকি দুই ফরম্যাটের মতো টেস্টেও ব্যাটে-বলে বাংলাদেশের পরিণত হয়ে ওঠার সাক্ষী হয়ে রইল অস্ট্রেলিয়া।