কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা আহসান। ছবি: সংগৃহীত

‘ধর্ষণ করতে না দেওয়া পর্যন্ত পিটিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা’

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:২৯
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:২৯

(প্রিয়.কম) রাখাইনে রাষ্ট্রীয় মদদে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানে গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ চলছেই। জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব মতে, নৃশংস ওই অভিযানের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা, যাদের ৬০ শতাংই শিশু। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে একজন ৩০ বছর বয়সী আহসান। তার চোখের সামনে মাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা ও বোনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছে মিয়ানমারের সেনারা।

আহসান তার পরিবারের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই অমানবিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা-কে। সংবাদমাধ্যমটির ওই প্রতিবেদন ভাষান্তরের মাধ্যমে প্রিয়.কম-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আহসান সহিংসতা শুরুর আগে রাখাইনের চীনখালী গ্রামে কৃষিকাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি বাচ্চাদের ইংরেজি শেখাতেন। কাজেই প্রতিটি দিনই তার ব্যস্ত সময় কাটত।

আল জাজিরা-কে আহসান বলেন, ‘২৫ আগস্ট সকালে যখন আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সাথে সকালের নাস্তা খাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামবাসীদের ওপর নির্বচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। আমার পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে তারা গুলি করে হত্যা করে। আমি আমার মায়ের লাশ ঘরের মেঝেতে পেছন থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পাশেই দেখতে পাই, আমার বোন যার মুখ ও শরীরে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের ক্ষত। আমি যখন এই দৃশ্য দেখলাম, তখন আমি আমার প্রাণপ্রিয় মায়ের পাশে বসে একটু কাঁদব, সে সুযোগটুকুও পাইনি। কারণ সেনাদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে আমাকে পালিয়ে আসতে হয়েছে।’

শিশুরাও শত মাইল পথ পায়ে হেঁটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে আসছে বাংলাদেশে। ছবিটি ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার টেকনাফের লম্বাবিল এলাকা থেকে তোলা। ছবি: ফোকাস বাংলা

শিশুরাও শত মাইল পথ পায়ে হেঁটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে আসছে বাংলাদেশে। ছবিটি ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার টেকনাফের লম্বাবিল এলাকা থেকে তোলা। ছবি: ফোকাস বাংলা

বোনের ওপর মিয়ানমার সেনাদের পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে একজন সেনা আমার বোনকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করলে সে বাধা দেয়। কিন্তু যতক্ষণ সে বাধা দিয়েছে ততক্ষণই তাকে অমানুষিকভাবে পিটিয়েছে সেনারা। তারপর... সেই থেকেই আমার বোনটি ভীষণভাবে মানসিক আঘাত পেয়েছে, সে কোনো কথা বলছে না। তবে বহু কষ্টে সে হাঁটতে পারত, আমি আর আমার ভাই দুজনে বাঁশ ও কম্বল দিয়ে একটি স্ট্রেচার বানিয়ে আমাদের আদরের বোনটিকে পুরো রাস্তা পিঠে বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি।’

‘আমারা বাংলাদেশে আসার পথে সেনা নির্যাতিনের অনেক বীভৎস-ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি, অসংখ্য মৃতদেহ, ক্ষুধার্ত শিশু ও সন্তান হারানো অসহায় বৃদ্ধ মানুষের কান্না। সবশেষে আমরা যখন বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছালাম তখন দেখি হাজার হাজার রোহিঙ্গা আমাদের মতোই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় আছে। ঠিক সেই সময়ে আমরা একটি নৌকা পেলাম, যা সবাইকে নদী পার করে বাংলাদেশে নিচ্ছে’, বলেন আহসান।    

দুর্বিষহ জীবনের এখনেই শেষ নয় উল্লেখ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গা বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের জীবন খুবই নির্মম, অমানবিক আর দুঃসহ। এখানে আমাদের কোনো থাকার জায়গা নেই, নেই পায়খানা করার কোনো ব্যবস্থা এমনকি প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের ঘুমানোর পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। আমরা যদি মিয়ানমারে থাকতাম তবে আমাদের নিশ্চয়ই মরতে হতো, তবে এর চেয়ে মরে যাওয়াও ভাল ছিল কারণ এখানে যেমন আছি একে বেঁচে থাকা বলে না।’

আহসান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সারা বিশ্ব আমাদের এই পরিণতিতে আমাদেরকেই সমর্থন করছে, এজন্য আমারা অসীম কৃতজ্ঞ। কিন্তু আপনি যেমন মানুষ, আমিও ঠিক তেমনই একজন মানুষ। পার্থক্য হলো আপনি এক দেশের নাগরিক, আমি অন্য দেশের। তাই বিশ্ববাসীর প্রতি আমার অনুরোধ, আমাদের যে কোনো একটি দেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ দিন। আপনারা যেভাবে বেঁচে আছেন, আমরাও সেভাবে বাঁচতে চাই।’

এদিকে, বেসরকারি হিসেবে বাংলাদেশে আসা মোট শরণার্থীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বেসরকারি হিসাব সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলো জানিয়েছে, তাদের নিবন্ধনের কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্যে জরুরি খাবার পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য সামগ্রী নিয়ে ইউনিসেফের ট্রাক কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

প্রিয় সংবাদ/শান্ত