কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

চিনির বদলে সুইটনারের ব্যবহার আসলে তেমন স্বাস্থ্যকর নয়। ছবি: সংগৃহীত

তেমন কোনো উপকারিতা নেই “স্বাস্থ্যকর” এই খাবারের

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০১৭, ২০:৪৮
আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭, ২০:৪৮

(প্রিয়.কম) ডায়েট করার সময়ে অনেকেই চিনির বদলে জনপ্রিয় কিছু আর্টিফিশিয়াল সুইটনার বেছে নেন। যেমন অ্যাসপারটেম, সুক্রালোজ এবং স্টেভিওসাইড। তারা আশা করেন এতে খাবারের ক্যালোরি কমবে। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, খাবারে চিনির বদলে আর্টিফিশিয়াল সুইটনার ব্যবহার তেমন একটা উপকারী নয়।

গবেষকেরা ১১ হাজারেরও বেশি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করেন। দেখা যায়, বেশি ওজনের মানুষ, উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন মানুষ, অথবা ডায়াবেটিস আছে এমন মানুষের জন্য ক্যালোরিবিহীন সুইটনারগুলো কোনো উপকারই করে না। অন্যদের ক্ষেত্রে উপকার তো হয়ই না, বরং দেখা দেয় ওজন বাড়ে, টাইপ টু ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। এই গবেষণার মূল লেখক মেগান আজাদ বলেন, এদের যেমন ওজন কমানোর কথা তা তো করেই না বরং দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে কিছু খারাপ প্রভাব দেখা যায়। 

পুরনো গবেষণাগুলোতে শুধুই ওজন বাড়া, অথবা শুধুই ডায়াবেটিসের ওপর সুইটনারের প্রভাব দেখা হতো। কিন্তু এই গবেষকেরা অন্যান্য রোগের ওপরেও এর প্রভাব দেখতে চান। তাদের এই বিশ্লেষণে যে ১১,৭৭৪টি গবেষণা ছিল, তাতে ১২ বছর এবং তার বেশি বয়সীদের ওপরে সুইটনার কী প্রভাব রাখে, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মাঝে যেগুলো র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল ছিল, সেগুলোই আসলে বিজ্ঞানের দিক দিয়ে বেশি সঠিক। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, অর্ধেক অংশগ্রহণকারীকে সুইটনার খেতে দেওয়া হয়েছে এবং বাকি অর্ধেককে দেওয়া হয়নি। এরপর এই দুই গ্রুপের মাঝে পার্থক্য দেখেন গবেষকেরা। 

বডি মাস ইনডেক্সের ওপর আর্টিফিশিয়াল সুইটনারের প্রভাব

নতুন এই গবেষণার জন্য বডি মাস ইনডেক্সের (BMI) ওপরে বেশি জোর দেওয়া হয়।  মানুষের BMI হলো তাদের ওজন এবং উচ্চতার একটি অনুপাত যা থেকে শরীরে কতটা চর্বি আছে তা বোঝা যায়। এর পাশাপাশি ওজন বাড়া, ওবেসিটি, গ্লুকোজ মেটাবলিজম, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং অন্যান্য হার্ট এবং কিডনি ডিজিজের ব্যাপারেও তারা তথ্য সংগ্রহ করেন। 

এসব গবেষণা থেকে কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়। দেখা যায়, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কোনো উপকারে আসে না এসব সুইটনার। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলো মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গবেষকেরা দেখেন, এসব সুইটনার গ্রহণের সাথে জড়িত রয়েছে ওজন বাড়ার ঝুঁকি, ওবেসিটির ঝুঁকি এবং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি।

অল্প কিছু ক্ষেত্রে সুইটনার মানুষের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উপকার করে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা করে না। এ থেকে গবেষকেরা বলেন এসব সুইটনারের ব্যবহার নিয়ে আরো বিশদ গবেষণা প্রয়োজন। 

অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা

গবেষক আজাদ জানান, এই গবেষণার আরেকটি লক্ষ্য ছিল। তা হলো অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীবের ওপরে সুইটনারগুলোর প্রভাব। 

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ায় বৈচিত্র্য আছে, তাদের স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় থাকে। এদের তুলনায় ওবেসিটি আছে এমন মানুষের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ায় বৈচিত্র্য কম হয়। এই বছরের শুরুর দিকে আজাদ এবং তার গবেষক দলের অন্য একটি গবেষণা প্রকাশিত হয় JAMA Pediatrics জার্নালে। সেখানে দেখা যায়, যেসব গর্ভবতী মায়েরা আর্টিফিশিয়াল সুইটনার গ্রহণ করেন, তাদের শিশুদের ১ বছর বয়সের মাঝেই ওবেসিটি দেখা দেবার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সুইটনার, ওবেসিটি এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সরাসরি কোনো সূত্র এখনো পাওয়া যায় না। তবে ভবিষ্যতে এ নিয়ে গবেষণা করার আশা রাখেন তারা। 

১৩৭ বছরের ইতিহাস

১৮৭৯ সালে প্রথম আর্টিফিশিয়াল সুইটনার, স্যাকারিন আবিষ্কৃত হয়। এরপর একে একে আবিষ্কৃত হয় সাইক্লামেট, অ্যাসপারটেম, অ্যাসিসালফেম, সুক্রালোজ এবং নিওটেম। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষণায় এসব সুইটনারের পক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। কখনো বলা হয় স্যাকারিন থেকে ক্যান্সার হয়, অ্যাসপারটেম থেকে হয় ব্রেইন টিউমার, ডায়েট সোডা ওজন বাড়ায়। অন্য সবকিছুর চাইতে সুইটনার গ্রহণের ওজন বাড়ার ক্ষেত্রেই বেশি প্রমাণ দেখা যায়। 

তাহলে কী করবেন আপনি? সুইটনার থেকে দূরে থাকবেন? এ ব্যাপারে লাইভ সায়েন্স কথা বলে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অ্যালিসন সিলভেতস্কি-মেনির সাথে। তিনি এক্সারসাইজ অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স এর একজন সহকারী অধ্যাপক। তিনি বলেন, এসব সুইটনারের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করার কিছু নেই। কিন্তু ওজন কমানোর জন্য তা গ্রহণের বিরুদ্ধেই মত দেন তিনি। 

সূত্র: লাইভসায়েন্স, সিএনএন

সম্পাদনা : রুমানা বৈশাখী