কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ফাইল ছবি
গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে কানাডার বিশেষ দূত নিয়োগ
আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:৩১
(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ ও সৃষ্ট সংকটের আশু সমাধানের লক্ষে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে বিশেষ দূত নিয়োগ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার বিশেষ দূত হিসেবে বব রায়ে’কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বব রায়ে কানাডার পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য।
নিয়োগ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক-নিরাপত্তা সংকট এবং গণহত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, মিয়ানমারে নিরাপত্তা ও মানবিক সংকটের আশু সমাধানের লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করবেন বব রায়ে। একই সাথে তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমসহ বিভিন্ন বিপন্ন জনগোষ্ঠীর বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। এছাড়া সহিংসতায় আক্রান্ত ও বাস্তুচ্যুত লোকজনকে কীভাবে সর্বোচ্চ সহায়তা করা যায় সে বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেবেন বব। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর এক সম্মেলনে এ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
ট্রুডো ঘোষণা দেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করে দুই কোটি মার্কিন ডলার দেবে কানাডা।
শিশুরাও শত মাইল পথ পায়ে হেঁটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে আসছে বাংলাদেশে। ছবি: ফোকাস বাংলা
এ সময় কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং এর দায় মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্ব ও সরকারকেই বহন করতে হবে।’ এছাড়া কানাডা কিছু শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার কথা ভাবছে বলেও জানান ক্রিস্টিয়া।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ৭ লাখেরও বেশি। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে শরনার্থীর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
তবে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, ১৫ অক্টোবর থেকে তা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে কিছু এরিয়াল ফুটেজ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উখিয়ার পালংখালির কাছে নাফ নদী পার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতায় জাতিসংঘ মনে করছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে।
সীমান্তের ওপারে সহিংসতা চলছেই। নিজ ভূমি পেছনে ফেলে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা জনস্রোত। ছবি ফোকাস বাংলা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ ভাগই হলো নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এর মধ্যে ১১শ’র বেশি রোহিঙ্গা শিশু পরিবার ছাড়া অচেনাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর এসব শিশুর চোখের সামনেই তাদের বাবা-মাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা, মা-বোনদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট প্রমাণ হাজির করেছে। অ্যামনেস্টি বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি-ভিডিও এবং সব ধরনের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, ‘রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ।’
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া জনশূন্য রাখাইন রাজ্য। ছবি: সংগৃহীত
অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২৮৮টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রাম। সংস্থাটি আরও জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে।
প্রিয় সংবাদ/শিরিন