কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

লুকান আলমগীর। ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল। প্রিয়.কম।

একজন আর্কিটেক্টের বিশাল সামাজিক দায়িত্ব আছে: লুকান আলমগীর

সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৩৩
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৩৩

(প্রিয়.কম) অক্টোবরের প্রথম সোমবার পালিত হয় বিশ্ব স্থাপত্য দিবস। এই দিবস উপলক্ষে প্রিয়.কম কথা বলেন এ প্রজন্মের জনপ্রিয় আর্কিটেক্ট লুকান আলমগীরের সাথে। বাবা খ্যাতিমান আর্কিটেক্ট প্রয়াত এ জে এম আলমগীর এবং মা আর্কিটেক্ট সেলিনা আফরোজার সুযোগ্য পুত্র হিসেবেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পে। মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্থপতি হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তিনি। কলম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট লিমিটেড, গ্ল্যামার ড্রেসেস লিমিটেড, জেনেসিস ওয়াশিং, সিলভার লাইন মাল্টিপল প্রজেক্টসহ অসংখ্য উল্লেখযোগ্য কাজ ইতোমধ্যেই করেছেন তিনি। স্থাপত্য দিবসে কথা বললেন বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্প, নিজের ব্যক্তিগত স্বপ্ন, ভিশন এবং প্রজেক্টগুলো নিয়েও। 

প্রিয়.কম: স্থাপত্য নিয়ে পড়ার ইচ্ছে হল কেনো?

লুকান আলমগীর: আমার বাবা আবু জাফর মোহম্মদ আলমগীর এবং মা সেলিনা আফরোজা, দুইজনই আর্কিটেক্ট। আব্বু এ জে এম আলমগীর নামেই বেশি পরিচিত। যমুনা ফিউচার পার্ক এর ডিজাউন উনার করা। আমার বাবারা ছিলেন পাঁচ ভাই, তারা সবাই কিন্তু আর্কিটেক্ট। আর্কিটাইপ নামে আমাদের নিজস্ব ফার্মেই সবাই কাজ করতেন। আমাদের বাসায় ড্রাফটিং টেবিল ছিল, ছোটবেলা থেকেই চাচাদের আঁকতে দেখতাম। আমার কাছে মনে হয়েছে; এটাই দেখেছি, এটাই শিখেছি, এটা দেখে দেখেই বড় হয়েছি। তখন থেকেই ড্রাফটের প্রতি এমন আকর্ষিত হয়েছি যে আর্কিটেক্ট ছাড়া অন্য কিছু হওয়ার ইচ্ছাও কখনো হয়নি আমার।

প্রিয়.কম: আপনি তো বোধহয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থাপত্যবিদ্যার উপর পড়ে এসেছেন, দেশে কেন পড়লেন না?

লুকান আলমগীর: দেশেই পড়ার ইচ্ছা ছিল। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে স্থাপত্যবিদ্যায় ভর্তি হয়েছিলাম। দুই বছর সেখানে পড়ার পর আমার পুরো পরিবার, মানে দাদী-চাচা-ফুপু সবাই আমেরিকায় মাইগ্রেট করে, আমিও সেখানে চলে যাই। ওখানে যাওয়ার পর নিউ ইয়র্কের প্র্যাট ইনস্টিটিউটে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে বাকি তিন বছর কমপ্লিট করি।

প্রিয়.কম: ওই দেশে তো কাজের সুযোগ বাংলাদেশের তুলনায় ভালো থাকার কথা। এমনকি এই দেশের তুলনায় সেখানে আপনি হয়তো আরো ভালোও করতে পারতেন। তাহলে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন?

লুকান আলমগীর: দেশের প্রতি তো সব সময়ই টান ছিল। কিন্তু আমার ফিরে আসাটা হয়েছিল আসলে আব্বু অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে। আমার ছোট ভাইও যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। আব্বুর অসুস্থতার সময়ও সেও এসেছিল, আব্বু মারা যাওয়ার পর সে চলে গেল। আমি কাজ শুরু করলাম এখানে, তারপর এক সময় এখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আব্বুর ফার্মেই কাজ শুরু করলাম

প্রিয়.কম: দেশে ফেরার আগে তো নিশ্চয় স্থাপত্য নিয়ে নিউ ইয়র্কে কাজ করেছেন?

লুকান আলমগীর: নিশ্চয়। সাত বছর সেখানে কাজ করেছি।

প্রিয়.কম: ওই সাত বছরের কাজের অভিজ্ঞতার পর হঠাৎ করে এই দেশে চলে আসায়, কাজের ক্ষেত্রে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল?

লুকান আলমগীর: প্রথম সমস্যা ছিল- কাজের পরিবেশের সাথে এডজাস্ট করতে আমার অনেক সময় লেগেছিল। প্রায় দুই-তিন বছর সময় আমার পরিবেশ বুঝতেই লেগেছে। প্রবাসী যারা এখানে এসে কাজ করেন তারা হয়তো ভালো বুঝতে পারবেন আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি। একটা আলাদা লাইফস্টাইল থেকে এসে হুট করেই ভিন্ন একটা জীবনযাত্রার সাথে মানিয়ে নিতে যে কারোরই সমস্যা হওয়ার কথা, আমারও তাই হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে আমি প্রথম প্রথম এখানে মানুষের আচরণ বুঝতে পারতাম না। কেউ আমাকে অপমান করে চলে যাচ্ছে, আমি হয়তো বোকার মতো হাসছি, তখন আমাকে অন্য কেউ বলতো- ও এই রকম অপমান করে গেল আপনি বুঝলেন না? আমি খুব অবাক হয়ে বলতাম- ও! তাই নাকি? অপমান ছিল নাকি এটা? কাজের ক্ষেত্রের কথা বলতে গেলে বলবো ওই জায়গার থেকে এখানে সুযোগ অনেক বেশি। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উন্নয়নশীল দেশ; জানালা দিয়ে তাকালেই দেখবেন বিভিন্ন জায়গায় কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে, এটা কিন্তু সব দেশে নেই। ফলে এই দেশের ডেভেলপমেন্ট কিন্তু আপনি রাস্তায় হাঁটলেই দেখতে পাচ্ছেন। সেইদিক থেকে বলছি, আর্কিটেক্টদের জন্য এখানে কাজের সুযোগ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করার ধরণ আর এ দেশের কাজ করার ধরণের মধ্যে পার্থক্য তো অবশ্যই আছে। ওই দেশে একজন আর্কিটেক্ট অনেক ডিটেইলে কাজ করেন; কিন্তু এই দেশে কিন্তু আর্কিটেক্টদের দায়িত্ব অনেক বেশি, তাকে সুপারভিশন করতে হচ্ছে, ম্যানেজমেন্ট করতে হচ্ছে, স্ট্রাকচারাল ব্যাপারগুলো দেখতে হচ্ছে, হেড ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে বসতে হচ্ছে, আরো অনেক কাজ। এটা ইউএসএতেও হয়, কিন্তু অনেক মানুষ মিলে এই কাজগুলো করেন, ফিসটা অনেক হাই, এখানে ফিসটা অনেক কম।

প্রিয়.কম: কোনো দেশের স্থাপত্যশিল্প ওই দেশের মানুষের জীবনযাত্রা এবং ঐতিহ্যকে কীভাবে প্রভাবিত করে? বা আদৌ কোনো প্রভাব ফেলে কি?

লুকান আলমগীর: ইন্টারেস্টিং! আগে মানুষের লাইফস্টাইল কি ছিল? আগে কমিউনিকেশন কি ছিল, এগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। এখন কিন্তু কমিউনিকেশন অনেক ফাস্টার। যে কোনো মুহূর্তে দুনিয়ার অন্য প্রান্তের যে কারোরই লাইফস্টাইল সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়ে যাচ্ছেন। এখন লাইফস্টাইল হয়ে গেছে গ্লোবাইলাজড, পপ কালচার বা পপুলার কালচার যেটাকে বলে। আমাদের দেশে আগে অনেক বেশি ডেকোরেটিভ-ক্লাসিক কাজ ছিল, কিছু ট্রেডিশনাল মানুষ ছিল যারা আমাদের সোসাইটিতে কন্ট্রিবিউট করতো। তারা এমন কিছু বানাতো যেটা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না, যেমন কাঁসার থালা, পিতলের কলসিসহ আরো অনেক কিছু। আমাদের দেশের ট্রেডিশনাল ড্রেস হচ্ছে শাড়ি, কিন্তু আমাদের মেয়েরা তো এখন জিন্স-শার্ট পরে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজে যেতে পারছেন, চলাফেরা করতে পারছেন। আমি বলতে চাচ্ছি যে ইটস চেঞ্জিং। নেচারও এই পরিবর্তনের কারণে আরো বেশি পপুলার কালচারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে তো একটা ইন্ডিভিজুয়্যালিটি আছেই। আমি মনে করি প্রতিটা দেশেই যখন আর্কিটেক্টরা কাজ করেন, তাদের কাজে একটা কালচারার ছাপ অবশ্যই থাকে। তবে এখন কিন্তু দেশের ঐতিহ্যের সাথে মিলিয়ে কাজ করার চেয়ে বিশ্বব্যাপী পপুলার কালচারটাকে নিয়ে কাজ হচ্ছে। এখন দেখবেন প্রচুর গ্লাস বিল্ডিং হচ্ছে, মর্ডান আর্কিটেকচারের রূপ ধারণ করছে। ফলে কোনো দেশের মানুষের ঐতিহ্যের চেয়ে এখন গ্লোবালাইজড পপ কালচারটাই প্রাধান্য বেশি পাচ্ছে।

প্রিয়.কম: প্রাচীন সেই স্থাপনাগুলো ছিল, যেমন বুদ্ধিস্ট, মোঘল, বৃটিশ ইত্যাদি। এদের নিজস্ব স্টাইল ছিল। ওই স্থাপনাগুলো এখনো দেখলে আমরা বলে দিতে পারি, কোনটা কোন টাইপ স্থাপনা। সবচেয়ে বড় কথা সেগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দনও ছিল। আমাদের দেশের কি আলাদা কোনো নিজস্বতা তৈরি হয়েছে স্থাপত্যের ক্ষেত্রে? নাকি এখনো আমরা সেই অনুকরণের জায়গাতেও পড়ে আছি?

লুকান আলমগীর: অবশ্যই পেরেছি। ইনফ্যাক্ট আমাদের দেশের যে মিড রাইজ বিল্ডিংগুলো আছে, পনের-বিশ তলার, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই রকম বিল্ডিং খুব আছে। তারা হয়তো অনেক বড় বিল্ডিং বানান, নয়তো চার থেকে দশতলার বিল্ডিং বানিয়ে থাকেন। আমাদের দেশের কনটেক্সট আলাদা, রাস্তাঘাটের একটা স্কেল আছে, ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, আমাদের ফুটপাতগুলা ছোট, রাস্তাঘাটে গাছ হয় খুব দ্রুত। এইসব কনটেক্সটের একটা গ্রাফিক তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশের যারা আর্কিটেক্টরা আছেন তারা এখন নিজস্ব গ্রাফিক্সে এই জিনিষগুলো ডেভেলপ করছেন। আমি তো মনে করি, কোনো কিছু একদমই অনুকরণ করা না।

প্রিয়.কম: বাংলামোটর মোড়ে একটা ব্লিডিং দেখেছেন হয়তো সিঙ্গারের শোরুম নীচে, এই রকম আরো কিছু বিল্ডিং ঢাকা শহরের আশেপাশে দেখা যায়। এই বিল্ডিংগুলো দেখলে মনে হয় যুক্তরাজ্যের কোনো স্থাপনাকে অনুকরণ করে করা হয়েছে, আমি বলতে চাইছি, স্থাপনার ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্বতা কোথায়?

লুকান আলমগীর: আমাদের আর্কিটেকচারে অনেকগুলা অনেকগুলা ভাগ আছে। আপনি যেটার কথা বলছেন সেটাকে আমরা বলি ক্লাসিক ডিজাইন যেটা ফ্রান্স থেকে এসেছে। এই ধরণের মোর ডেকোরেটিভ কাজ আমরা এখনো করি, তবে সেটাও কিন্তু সম্পূর্ণ আমাদের স্টাইলে করি। আপনি বাংলামোটরের যে বিল্ডিংটার কথা বলছেন, সেই রকম বিল্ডিং আপনি বৃটিশদের দেখেছেন বলে আপনার কাছে মনে হচ্ছে এটা অনুকরণ করে বানানো। কিন্তু সে রকম একদমই না। এ রকম ধরণের কাজ আগেও হয়েছে; এখনো হচ্ছে, শুধু আমাদের এখানে না, ফ্রান্সে, আমেরিকাতেও হচ্ছে এগুলো। আপনি দেখছেন সেটা পুরোনো স্থাপনার অনুকরণ বা বৃটিশদের অনুকরণ করা কিন্তু সেটা কিন্তু অনেক বেশি মোল্ডিং করা। ইটস মোর অফ অ্যা নিউ ক্লাসিক্যাল ডিজাইন। আমাদের দেশে মেইন্টেইন করা হয় না ঠিক মতো, সেটা যদি করা হতো তবে এটা কিন্তু মোটেও খারাপ কোনো ডিজাইন না।

প্রিয়.কম: গ্রিন বিল্ডিং বলে কি যেন একটা টার্মের কথা বলছিলেন, আপনারা তো এখন বোধহয় গ্রিন বিল্ডিং এর দিকেই বেশি ফোকাস করছেন? গ্রিন বিল্ডিং সম্পর্কে যদি একটু বলতেন।

লুকান আলমগীর: আমাদের পৃথিবীর বয়স হচ্ছে ফোর পয়েন্ট ফাইভ বিলিয়ন ইয়ার্স, টু বিলিয়ন ইয়ার্স ধরে বিভিন্ন স্পেসিস এসেছে; প্রথম ওয়ান বিলিয়ন ইয়ার রুল করেছে অ্যাকুয়াটিক ক্রিয়েচার, আরো ওয়ান ইয়ার করেছে ডাইনোসর্স, লিজার্ডস এরা। এরপরে সিক্সটি ফাইভ মিলিয়ন ইয়ার্স সময় মানুষ হতে লেগেছে। মানুষ যে পরিমাণ অত্যাচার এখন পৃথিবীকে করছে সেটাতে দেখা যাচ্ছে উত্তর-দক্ষিণে মেরুতে যে বরফ আছে সেটা গলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের যে অবস্থা এখন সেটাতে দেখা যাচ্ছে যে এক ডিগ্রী সেলসিয়াস আপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঠারো শতাংশ ভূমি কিন্তু একেবারে পানিতে তলিয়ে যাবে। এই অবস্থাকে আরো ভয়াবহ না করে তুলতে সচেতনার জন্য আমরা গ্রিন বিল্ডিং তৈরি করছি। আগে মানুষ বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য দেখতো, এখন কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছে। আমরা যারা নিউ জেনারেশন আছি, তারা কিন্তু এখন সৌন্দর্যের চেয়ে সাস্টেনেবল পরিবেশের বজায় রাখার জন্য, মোর সাস্টেনেবল বিল্ডিং বানাতে আগ্রহী হচ্ছি। ফ্রান্স-ভারত এরা কিন্তু সাস্টেনেবল সিটি তৈরি শুরু করেছে। সেখানে মাল্টি লেভেলে এগ্রিকালচার বা ফার্মিং এ চলে যাচ্ছে। গ্রিন বিল্ডিং লুকটাই এমন যে মনে হবে কেউ পাহাড়ের মধ্যে বসবাস করছে। সো ইউ আর গোয়িং ব্যাক টু ফরেস্ট। একটা ফরেস্টের যে একটা টোটাল ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স, সেটাকেই আমরা ফিরিয়ে আনতে চাইছি এই গ্রিন বিল্ডিং এর মাধ্যমে।

প্রিয়.কম: গ্রিন বিল্ডিং এর বৈশিষ্ট্য কি? ভিতরে কি কি থাকবে?

লুকান আলমগীর: এটা একটা গ্রাউন্ড জিরো বিল্ডিং, যেখানে একবার পাওয়ার ঢুকবে, একবার পানি ঢুকবে, একবার গ্যাস ঢুকবে এবং তারপর এই টোটাল জিনিসটা রিসাইকেল হবে। এই মুহূর্তে আমরা বৃষ্টির পানিটাকে হার্ভেস্ট করছি। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সেটাকে ব্যবহার করছি খাওয়ার জন্য, গোসলের জন্য। তারপর সয়েল ওয়াটার যেটা কমোডের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাকে নিয়ে পিউরিফাই করে আবার ফ্ল্যাশে দিচ্ছি। যে কোনো কাজে ব্যবহৃত পানিকেই আবার পিউরিফাই করে ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। আমরা এখন এলইডি লাইটে চলে গেছি; আগে দেখা যেত একটা লাইট যে পরিমাণ এনার্জি কনজিউম করতো, এখন আমাদের টোটাল ফ্লোরে অনেক অনেক বেশি লাইট একটা পাওয়ার দিয়ে কনজিউম করা সম্ভব। সাইন লাইটটাকে আমরা রিজার্ভ করে নিয়ে এই লাইটগুলা জ্বালাচ্ছি। ফলে ইলেক্ট্রিসিটি না হলেও হচ্ছে, যদিও এটাতে এখনো অতটা ডেভেলপমেন্ট আসেনি, আমাদের প্রোডাক্টগুলো এখনো এতটা ম্যাচিউর হয়নি। দেখা যায় যে পুরা ছাদে সোলার পাওয়ার লাগালে, একটা ফ্লোর চলছে, বাকি ফ্লোরগুলো চলছে না। তারপর উইং মিল আছে, ফলে বাতাস থেকে এনার্জি নিচ্ছি। ওয়াটার মুভমেন্ট থেকেও আমরা এনার্জি নিচ্ছি। এ রকম আর কি। অর্থাৎ যে কোনো এনার্জিকে প্রাকৃতিকভাবে রিনিউবল করে সেখান থেকে এনার্জি নিয়ে আমরা ব্যবহার করার উদ্যোগ নিচ্ছি। এ কাজগুলোই আমরা গ্রিন বিল্ডিং এ করতে চাইছি।

প্রিয়.কম: পুরো বাংলাদেশে গ্রিন বিল্ডিং এর সংখ্যা কত?

লুকান আলমগীর: আমরা (আর্কিটাইপ) গাজীপুরে দুইটা গ্রিন বিল্ডিং এর কাজ শেষ করেছি। আমি যেই টাইপ গ্রিন বিল্ডিং এর কথা বলছি, সেটা ওয়াশিং ফ্যাক্টরী। সেটা পুরো ওয়ার্ল্ডেই মাত্র সাত-আটটা প্লেটিনাম হয়েছে, এর মধ্যে দুইটা বাংলাদেশ থেকে আর দুইটাই আর্কিটাইপের। আর এমনিতে টোটাল গ্রিন বিল্ডিং এর কথা যদি বলেন, তাহলে এখন অনেকগুলোই আছে। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশের নীচে তো মনে হয় না হবে।

প্রিয়.কম: গ্রিন বিল্ডিং এর কনসেপ্টটা বাংলাদেশে কতদিন ধরে এসেছে?

লুকান আলমগীর: তিন-চার বছরের মতো বা আরো কম হবে। আগে গ্রিনের সার্টিফিকেশন আনার জন্য বাংলাদেশে লোক ছিল না। আগে এটা ভারত-আমেরিকা বা সিঙ্গাপুর থেকে আসতো, কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই গ্রিন সার্টিফিকেশন তৈরি করতে পারি এবং আমাদের দেশের নিজেদের ওয়েতেই পারি। আগে যেটা ছিল, অনেক ধরণের বিদেশী উইং ক্যালকুলেট করে করতে হতো, অনেক সময় দেখা যেত এনার্জি সিম্যুলেশনে পাশ করলেও প্র্যাকটিক্যালি ওয়ার্ক করতো না কিন্তু আমাদেরটা প্র্যাকটিক্যালি কাজ করছে। আমরা এসি ব্যবহার না করেও প্রাকৃতিকভাবে এসির মতোই ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করছি। এসি তো ব্যাড ফর হেলথ।

প্রিয়.কম: ঢাকা তো দিন দিন আরো বেশি অপরিকল্পিত শহর হয়ে উঠছে। একটা বিল্ডিং অন্য বিল্ডিং এর সঙ্গে লাগানো; আলো নেই, বাতাস নেই। এগুলোকে অর্গানাইজ করার উপায় কি? বিল্ডিং যারা ডিজাইন করছেন, যারা বানাচ্ছেন, তাদেরও তো দায়িত্ব থাকে এই বিষয়ে, আপনার কি মনে হয়?

লুকান আলমগীর: দায়িত্ব সবারই আছে কিন্তু যারা বিল্ডিং এর মালিক বা জায়গার মালিক তাদের তো একটু লোভ কাজ করেই যে মোর স্কয়ার ফিট, মোর রেন্ট। ওই জায়গা থেকে তারা জায়গা ছাড়তে চায় না। এই বিষয়ে রুলসও আছে, রুলসগুলো ভেঙেই তারা যত্রত্ত্র বিল্ডিং বানাচ্ছেন। এই আইনগুলো মানলে হয়তো সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। যেগুলো বানানো হয়ে গেছে, সেগুলো তো আর পরিবর্তন করা সম্ভব না। তবে কিছুটা লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে হয়তো সম্ভব। যদি দুইটা বিল্ডিং কাছাকাছি লাগোয়া থাকে আর আমরা যদি সেটাকে একটা বিল্ডিং হিসেবে কনসিডার করি তাহলে কিন্তু এই গ্যাপটা আর গ্যাপ মনে হচ্ছে না। ধরেন যমুনা ফিউচার পার্ক একটা বিশাল জায়গা, কিন্তু পুরা এলাকাটাকে কিন্তু কিছু ছোট ছোট প্লাজায় বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিল্ডিং ধরে যদি এই রকম ছোট ছোট প্লাজা করা যায় তাহলে এই ধরণের সমস্যা দূর করা পসিবল।

প্রিয়.কম: একজন আর্কিটেক্ট এর কাজ কি বলে মনে হয় আপনার?

লুকান আলমগীর: আর্কিটেক্ট এর কাজ অনেক বড়। একজন আর্কিটেক্ট এর বিশাল সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটিস আছে। মানুষের লাইফস্টাইলকে কিন্তু সে ভিশন করছেন, নেক্সট জেনারেশনের লাইফস্টাইলকেও কিন্তু সে ডিফাইন করছেন। এই যে এত এত ম্যাটেরিয়ালসকে সমন্বয় করে মানুষের সাথে এনগেইজ করছে, এটাও আর্কিটেক্ট এর রেসপনসিবিলিটি।  

প্রিয়.কম: আপনার ভিশন কি?

লুকান আলমগীর: সময় যেটা ডিমান্ড করবে। এই মুহূর্তে আমি আমার কাজের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আনার চেষ্টা করছি।

প্রিয়.কম: সেটা কি রকম?

লুকান আলমগীর: আমার এখন যে প্রজেক্টটা চলছে ফিফটিন ডিগ্রী রিভারভিশন, সেটার অনেকখানি ইন্সপাইরেশন আমি রবীন্দ্রনাথের মায়াবন বিহারিনী থেকে পেয়েছি। এই গানটাকে ডিফাইন করা খুব কঠিন। আপনি বুঝতেই পারবেন না কি থেকে কি হচ্ছে, শুধুমাত্র অনুভব করতে পারবেন। গানের ওই লাইনটা খেয়াল করেন- থাক থাক নিজ মনে দূরেতে/আমি শুধু বাঁশরির সুরেতে/পরশ করিব ওর তন মন/অকারণ।ইটস অ্যা বিউটিফুল লাইনস। এই যে আকূলতা, একটা জিনিস আমি পাচ্ছি না কিন্তু দূর থেকে সেটাকে প্রেইজ করে যাচ্ছি। এমন একটা জিনিস, যেটাকে আমি টাচ করতে পারছি না, কিন্তু আমার ভিতরে সেটা পাওয়ার আনন্দটা হচ্ছে। এটা তখনই হয় যখন চোখ একটা জিনিস দেখছে কিন্তু মাথা আরেকটা জিনিস ভাবছে। দুইটা যখন কন্ট্রাডিক্ট করছে তখনই ওই জুবেলিশনটা হয়। লুই আই. কান এর স্থাপনায় এই জিনিসগুলো ছিল। আমরাও এই আনন্দটা আমাদের নতুন কাজটায় নিয়ে আসছি। আমরা এটা কিভাবে নিয়ে আসছি- ওই স্পেসটা যখন ফ্লো করবে, সেখানে নির্দিষ্ট একটা রিভারভিশন ক্রিয়েট করবে। আমরা সেখানে কিছু কিছু ওয়াল ফিফটিন ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘুরিয়ে দিচ্ছি, যাতে একটা লেভেল অফ রিভারভিশন ক্রিয়েট করা হয়। সেটা খুব ড্রামাটিক ফিলিং ক্রিয়েট করবে। পুরা অন্ধকার এক রুমে চিকন এক উইন্ডো থাকবে, মনে হবে হ্যাভেন থেকে একটা লাইন আসছে রুমে। এই ধরণের কনসেপ্ট আর কি।

প্রিয় সাক্ষাৎকার/গোরা।