কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সাংবাদিকের কাছে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন রাজুমা। ছবি: সংগৃহীত

‘সন্তানকে আগুনে ছুড়ে মেরে আমাকে ধর্ষণ করে সেনারা’ 

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:২৭
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:২৭

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় মদদে দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানে গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব মতে, নৃশংস ওই অভিযানের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার রোহিঙ্গা, যাদের ৯০ শতাংই নারী ও শিশু। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে একজন রাজুমা।

চোখের সামনে রাজুমার দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তান সাদিককে আগুনে পুড়িয়ে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে মিয়ানমারের সেনারা। একইসঙ্গে হত্যা করা হয় রাজুমার বাবা-মা, দুই বোন ও ছোট ভাইকে। কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরের এক ঝুপড়ি ঘরে বসে তিনি স্বজন হারানো এবং তার ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্যাতন ও অমানবিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা'র কাছে। 

ণ বাঁচাতে এভাবে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গারা। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রাণ বাঁচাতে এভাবে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন রোহিঙ্গারা। ছবি: ফোকাস বাংলা 

দুঃখভারাক্রান্ত রাজুমা রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত তার গ্রাম ‘তুলাতুলি’তে সেনা আক্রমণের পর তার সাথে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর নির্যাতনের বিষয়ে আলজাজিরা-কে বলেন, ‘যখন সেনারা আমাকে মারতে শুরু করে তখন দেড় বছর বয়সী শিশু-সন্তান সাদিক আমার কোলে।’

রাজুমা বলেন, সেনাদের প্রচণ্ড মারে সাদিক আমার কোল থেকে পড়ে যায়। এরপর সেনারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির দেয়ালের কাছে নিয়ে যায়। এসময় আমি শুনতে পাই আমার সন্তান সাদিক কাঁদছে। কয়েক মিনিট পর তারা আমার সন্তানকেও মারে। আমি দৌড়ে গিয়ে সাদিককে আবারও জাপ্টে ধরলে, তারা কোল থেকে আমার সন্তানকে কেড়ে নিয়ে আগুনে ছুড়ে মারে। পরে আমাকে তারা সবাই মিলে ধর্ষণ করে।’

সন্তানহারা এই মা বলেন, ‘তখন আমার মনে হচ্ছিল, আমিই যেন ওই আগুনে পুড়ছিলাম।’

আগুনে পুড়ে যাওয়া জনশূন্য রাখাইন রাজ্য। ছবি: সংগৃহীত

সেনাদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া জনশূন্য রাখাইন রাজ্য। ছবি: সংগৃহীত 

ঘটনার দিন রাজুমার স্বামী মোহাম্মদ রফিক সেনাদের চোখের আড়াল হয়ে প্রাণে বাঁচতে পেরেছিলেন। রফিক বলেন, ‘ওই ঘটনার পর থেকে রাজুমা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, মানসিক চিকিৎসার সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকায় তাকে চিকিৎসা দিতে পারছি না।’ হতভাগ্য এই স্বামী আরও বলেন, ‘মাঝেমাঝে রাজুমা আমাকে বলে, তার মাথা ঘুরছে। ওই সময় তার অনেক কষ্ট হয় এবং এটা সে সহ্য করতে পারে না। মাঝেমাঝে সে আমাদের সন্তানকেও দেখতে পায়। তখন রাজুমা চিৎকার করে কাঁদে। আর এখন তো সে প্রতিদিনই কাঁদে।’

প্রিয় সংবাদ/শান্ত