কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণে বেঁচে আসা যুবক আব্দুল আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‘গুলি করার পর নড়তে থাকলে তাকে জবাই করে দেয়’

ইতি আফরোজ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:৩৮
আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:৩৮

(প্রিয়.কম) ‘আমার সামনে কয়েকজনকে জবাই করেছে আবার গুলি করেও মেরেছে। গুলি মারার পর যদি কেউ নড়তে থাকে তাহলে তাকে জবাই করে দেয়।’ ঠিক এভাবেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ভয়ংকর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন প্রাণে বেঁচে আসা রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল আজিজ।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর কাছে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা যুবক আজিজ সেখানকার পরিস্থিতি এবং নির্যাতনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে জানিয়েছে, সেদিন বুধবার ছিল। বিকেলে আসরের নামাজ পড়তে বের হলে তাকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। 

রাখাইনের গারোতো বিলে তার বাড়ি। বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছু্‌ই বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। চোখ খোলার পর বুঝতে পারে তাকে একটা গোয়াল ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

তখন ওই ঘরভর্তি তার আরও মানুষ ছিল, যাদের কে তার মতই ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে সবাইকে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ওখানে দুইজন পাহারাদার ছিল বলে কারো বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। এদিকে তাকে প্রচণ্ড মারধর করে আর মিয়ানমারে ভাষায় বলে ‘লো কালা’ অর্থাৎ তোরা আমাদের দেশি না, তোরা বাঙালি, তোরা ওখানেই চলে যা।’ 

আজিজ জানান, তার সামনেই কয়েক জনকে জবাই করছে আবার কাউকে কাউকে গুলি করে মেরেছে। গুলি করার পর তখনো যদি কেউ নড়তে থাকে তাহলে তাকে জবাই করে দেয়। তবে সুযোগ পেয়ে এশার নামাজের সময়ে পাহারাদাররা দরজা থেকে সরে গেলে তখন তাদের অবস্থান দেখে আজিজ পালিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি।

এছাড়া সে যখন ওইখান থেকে পালিয়ে যান সে সময়ও যাদের হত্যা করেনি তাদের সবার হাত-পা বাঁধা ছিল। তখনও ওখানে অনেক মানুষ ছিল। কিন্তু শুধু ছিল পুরুষ মুসলিম, কোনো নারী ছিল না। তবে এরপর তাদের কি হয়েছে, তা সে জানেন না বলে জানিইয়েছেন তিনি।  

প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট গভীর রাতে বেশ কিছু পুলিশ পোস্টে একযোগে হামলার পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী নজিরবিহীন অমানবিক অভিযান শুরু করে। এর পর থেকেই বাংলাদেশমুখী শরণার্থীর ঢল নামে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান যাইদ রাআ’দ আল হোসাইন সহিংসতার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করে গৃহীত পদক্ষেপকে ‘স্পষ্ট বৈষম্য’ আচরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক বিষয়গুলোর তোয়াক্কাও করছে না বলে দাবি যাইদ। তিনি মিয়ানমার সরকারের প্রতি চলমান এ সংকট দ্রুত নিরসনের দাবি জানান। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কথাও বলেছেন যাঈদ।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশে নতুন আসা ১ লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগই শিশু ছিল। এদের মধ্যে ১২ হাজার এক বছরের কম বয়সী শিশু।

প্রিয় সংবাদ/আশরাফ