কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি: সংগৃহীত

প্রসঙ্গ একসেঞ্চার, অজুহাত ইউনিয়ন

এম. মিজানুর রহমান সোহেল
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০১৭, ১৭:২৫
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭, ১৭:২৫

(প্রিয়.কম) বাংলাদেশ থেকে সম্প্রতি ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে একসেঞ্চার। আগামী ৩০ নভেম্বর হবে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে চলে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ৫৫৬ জন কর্মীর সবাইকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত বড় প্রতিষ্ঠান যেন বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন ঢাকা জর্জ কোর্টের অ্যাডভকেট এবং গ্রামীণফোন ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড বোর্ডের চেয়ারম্যান মনিরুল কাদের হিমু। 

একসেঞ্চার বন্ধ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ বন্ধ হওয়ার পিছনের কারণ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ব্যবসায়িক নীতি পরিবর্তন করার কথা বলছেন। আর যারা কর্তা ব্যক্তি ছিলেন তাঁরা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে সেখানকার ইউনিয়নকে দায়ী করার চেষ্টা করছেন। ভালো। শাক দিয়ে নাকি মাছ ঢাকা যায়। কৈ বা পুটি সাইজের হলে সম্ভব সেটা। কিন্তু একসেঞ্চারের ব্যর্থ কর্তা ব্যক্তিরা দেখি নিজেদের ব্যবসায়িক ব্যর্থতার তিমি মাছও এখন শাক দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছেন! চেষ্টা করে দেখছি টুকটাক সফলও হচ্ছেন। তিন/চার দিন ধরেই একসেঞ্চার বন্ধের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট খাতে আলোচিত বিষয়।

পত্রিকায় পড়ি, বিশিষ্ট জনেরা কপালে ভাঁজ ফেলে গভীর হতাশা নিয়ে বলছেন- আহা ইউনিয়নের জন্য আর টিকতে পারলো না! কল্পনায় দেখি শাক দিয়ে ঢাকা সেই তিমি মাছের পেটের উপর বসে গম্ভীর মুখে উনারা বিবৃতি দিচ্ছেন। বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে যেমন বৌকে দোষ দেয়া সহজ- মানুষ সহজে 'খায়' তেমনি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে আর সেখানে যদি আধা মরা কোনো ইউনিয়নও থাকে তবে কর্তৃপক্ষের পোয়া বারো। সব দোষ ইউনিয়নের উপর চাঁপিয়ে দিয়ে নিজেদের ঝাঁড়া হাত পা। নিজেদের কুকীর্তি অদক্ষতা আর ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ইউনিয়ন সব জায়গাতেই সব সময় একটা ভালো 'অজুহাত' হিসেবে কাজ করে।

একটি প্রতিষ্ঠানে কখনোই প্রথম দিনেই ইউনিয়ন গড়ে উঠে না, ইউনিয়ন গড়ে উঠে যখন মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যায়। দানবিক নির্মমতার হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য, নিজেদের আইনী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একক অসহায় ব্যক্তি এক হয় তখন এই একতাই ইউনিয়ন। এই যে সারা পৃথিবীতে কিছুদিন পরপর বিশাল বিশাল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়ে তার কয়টাতে ইউনিয়ন আছে বা ছিলো বা সেসব পতনের জন্য ইউনিয়ন দায়ী? আমার চোখে তো একটাও পড়েনি। 

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসি। ইউনিয়নের 'অত্যাচারে' বাংলাদেশে কয়টা প্রতিষ্ঠান লাঠে উঠেছে দেখানতো? বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ইউনিয়ন আছে গার্মেন্টস খাতে। সেখানে গার্মেন্টস বন্ধ হওয়া এবং নতুন গার্মেন্টস তৈরি হওয়া একটা নিয়মিত ঘটনা। যেসব গার্মেন্টস বন্ধ হয়েছে এবং হচ্ছে। খবর নিয়ে দেখুনতো কয়টা ইউনিয়নের জন্য বন্ধ হয়েছে? একটাও পাবেন না। কিছু বন্ধ হয় হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে অভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির জন্য। কিছু অবকাঠামো সংকটজনিত কারণে আর কিছু পরিবর্তিত দেশীয় এবং বৈশ্বিক পরিবেশের জন্য। একটিও ইউনিয়নের জন্য নয়।

একসেঞ্চার গঠিত হয় ২০১০ সালে। প্রথম দিন থেকেই এটা মুখ থুবড়ে পড়ে। বিজ্ঞ বিশাল কর্পোরেট কর্তা ব্যক্তিরা এদিক সেদিক চেষ্টা করেও যখন কোন ব্যবসায়িক সফলতা পেলেন না। তাঁরা গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন। টাকা আয়ের কোন বুদ্ধি উনারা আর বের করতে পারলেন না! অবশেষে তাদের 'সুনজর' পড়লো সাধারণ কর্মীদের উপর। ছাঁটাই করো, বেতন কমাও, ওভারটাইম না দিয়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য করো ইত্যাদি ইত্যাদি। 

তখন ভয়ে আতংকে মরোমরো বেচারা নিরীহ শতশত তরুণ তরুণী কর্মীরা যখন অন্যায় অবিচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিজেরা এক হলো, ইউনিয়ন হলো তখন বিজ্ঞ কর্তৃপক্ষ। তারা আবিষ্কার করল- যতো দোষ ইউনিয়ন ঘোষ। ইউনিয়ন হওয়ায় উনারা আর ওভারটাইম ছাড়া কাজ করাতে পারলেন না, বেতন বাড়াতে হলো, বেআইনী ছাঁটাই বন্ধ হলো। দোষতো ইউনিয়নেরই! ইউনিয়ন জন্মের অনেক আগেই ব্যবসা লাটে উঠেছিল। যাক ইউনিয়ন আসায় উনাদের রক্ষা। নিজেদের ব্যর্থতা ইউনিয়ন দিয়ে ঢাকার একটা সুযোগ পেলেন উনারা। 

প্রিয় টেক/কামরুল