কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কবি ও গীতিকার শামসুর রাহমান। ছবি: নাসির আলী মামুন।

লুকিয়ে থাকা একজন গীতিকার...

শিবলী আহমেদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:০৯
আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:০৯

(প্রিয়.কম) ‘গীতিকার শামসুর রাহমান’। প্রথম বাক্যটি পড়ে অনেকেই হচকে যেতে পারেন হয়তো। কেননা, অধিকাংশের কাছেই শামসুর রাহমান মানেই কবিতা। অথচ কবিতার পাশাপাশি তিনি তার জীবদ্দশায় শতাধিক গান লিখেছেন। তাঁর কিছু কবিতাকে গানে রূপান্তর করা হয়েছে বটে কিন্তু আলাদা করেও অনেক গান লিখে গিয়েছেন শামসুর রাহমান। বাংলার মানুষ তার লেখা গান শুনেছে, হয়তো গুনগুনিয়ে গেয়েছে। কিন্তু সেই গানটির রচয়িতা যে খোদ শামসুর রহমান, সেই তথ্য হয়তো শ্রোতাদের কাছে অজানা। যদি বলি- নগর বাউল ব্যান্ডের তুমুল জনপ্রিয় গান ‘সুন্দরী তমা আমার, তুমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতে পার...’ গানটি শামসুর রাহমানেরই লেখা, তাহলে অনেকেই হয়তো থতমত খেয়ে উঠবেন। কিন্তু এটাই সত্য। ‘তারায় তারায়’ শিরোনামে জেমসের গাওয়া এই গানটির গীতিকার শামসুর রাহমান। এ গানের বিষয়ে সংবাদের শেষে আরও কিছু বলা হবে, তার আগে একজন গীতিকার হিসেবে শামসুর রাহমানের অবদানের কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন। অনুসন্ধান লব্ধ ফলাফল বলে, ষাট-সত্তর দশকে তিনি টেলিভিশন ও রেডিওর জন্য গান লেখা শুরু করেছিলেন। কিছু বাংলা চলচ্চিত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর লেখা গান। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মাটির পাহাড়’ নামের চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে শামসুর রাহমানের লেখা গান। এছাড়াও ‘এইতো জীবন’, ‘রাজবাড়ি’ এবং ‘বাঁধন হারা’ সিনেমাসহ আরও বেশ কিছু সিনেমার জন্য গান লিখেছেন তিনি।

শামসুর রাহমান। ছবি: সংগৃহীত।

তাঁর রচিত গানগুলোর বেশিরভাগের মধ্যেই পাওয়া যায় দেশপ্রেমের ছাপ। রোমান্টিক ঘরানায়ও লিখেছেন বেশ কিছু গান। তাঁর লেখা অনেক গানের সুর করেছেন দেশের স্বনামধন্য সুরকারেরা। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- প্রয়াত আব্দুল আহাদ, খোন্দকার নুরুল আলম, সত্যা সাহা, ও সমর দাস। সেই সকল গানে কণ্ঠ দিয়েছেন দেশের প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পীরা। রুনা লায়লা, মাহমুদুন নবী, রফিকুন নবী, নাহিদ নিয়াজী, ফেরদৌসি রহমান ও আব্দুল হাদী’র কণ্ঠেও শোভা পেয়েছে তাঁর লেখা গান। শামসুর রাহমানের লেখা শতাধিক গানগুলোর মধ্যে বহুল জনপ্রিয় এবং শ্রোতানন্দিত গানগুলোর মধ্যে কয়েকটি গান হচ্ছে- ‘স্মৃতি ঝলমল সবুজ মাঠের কাছে আমার অনেক ঋণ আছে’- এ গানটি গেয়েছেন রুনা লায়লা। এছাড়াও ‘ফসলের মাঠে মেঘনার তীরে, ধূ ধূ বালুচরে তুমি-আমি লিখি প্রাণের বর্ণমালা’ গানটিও গেয়েছেন রুনা। ফেরদৌসি রহমানের কণ্ঠে শামসুর রাহমানের যে গান দুটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, সেই দুটি গান হচ্ছে-‘মধুময় পৃথিবীকে নীল আকাশ ডাকবেই’ এবং ‘তুমি কে এমন বুঝিনাতো’। শ্রোতা হৃদয়ে প্রবলভাবে দোলা দেওয়া ‘কখনও আমার মাকে গাইতে শুনিনি কোনো গান’- এটির গীতিকার শামসুর রাহমান। কণ্ঠ দিয়েছেন রফিকুন নবী। নাহিদ নিয়াজীর গাওয়া ‘বাতাসেরে বলি বল কে গো আমি, বাতাস বলে না কিছু আর’ এবং আব্দুল হাদী’র কণ্ঠে গাওয়া ‘কতদূর নিয়ে যাবে’ গান দুটির রচয়িতাও শামসুর রাহমান।

শামসুর রাহমান। ছবি: সংগৃহীত।

এ গানগুলো ছাড়াও শামসুর রাহমান আরও যেসব গান লিখে গিয়েছেন, সেসব হচ্ছে- ‘এ দেশ আমার’, ‘জননী আমাকে দিয়েছ অন্ন জল, ‘শ্যামল কোমল শান্ত ছায়ায়’, ‘তোমরা ঘুমাও আমি জেগে থাকব’, ‘এ দেশ আমার চোখের আলোয়’, ‘আলো ছড়াও ভালোবেসে, যখন আকাশে পায়রা উড়ে’, ‘এ স্মৃতিসৌধে শিশির ঝরে’, ‘নদীটির কাছে নদী এসে বলে গল্প শোনায় বলো’, ‘আমার সবাই একাত্তরের শহীদের সন্তান’, ‘আগুনের অক্ষরে লেখা নাম নজরুল’, ‘অঙ্গে আমার কী মধুর বাজে অনাদিকালের হাসি’, ‘কৃষ্ণচূঁড়ার হাসি আমার প্রিয়’, ‘ফসলের মাঠে, মেঘনার তীরে’, ‘এই মাটির কণা’, ‘স্বাধীনতা তুমি আছ বলে গোলাপ চামেলী ফোটে’, ‘এল নববর্ষ, শুভ নববর্ষ’, ‘বৈশাখী দিনে ধুধু পিপাসার ক্ষণে’, ‘শূন্য ডালে হঠাৎ হাওয়ায় লাগলো ঝাঁকি’, ‘বৈশাখেরই অগ্নিঝালর দহন আনে জুড়ে’, ‘কথার ছলেই কথা দিয়েছিলে’, ‘তোমার হৃদয়ে শ্রাবণের বর্ষণ’, ‘মেঘের মিনারে রঙধনু জাগে’, ‘পদ্মে আমার প্রাণের ভাষা ব্যাকুল ডাকে’, ‘পুষ্পের নিবিড় মেলা’, ‘মেঘ-তরঙ্গ স্মৃতির ফলকে রৌদ্র’, ‘বাসনার ঘাট’, ‘স্বপ্ন শিশির মদির গোধূলি বেলা’, ‘আনন্দ কুঁড়ি’, ‘চন্দনরূপী জ্যোৎস্না কাল’, ‘স্বর্ণলতায়’, ‘রঙিন গোঠ’, ‘তীর্থের রেণু’, ‘চৈতী স্মৃতির কান্না’, ‘কবি চোখ’, ‘অশুভ দ্বন্দ্ব’, ‘মেঠো বাঁশি’, ‘দুর্গম প্রান্তরে মন তবু থাক না’, ‘নীল দিগন্তে সোনালী স্বপন’, ‘কালের তিমিরে এসেছে আলোর পায়রা’, ‘এই দিন চিরদিন’, ‘জনতার চোখে জ্বলবে’ এবং নগর বাউল ব্যান্ডের ভোকাল জেমসের কণ্ঠে গাওয়া ‘তারায় তারায়’।

শামসুর রাহমান। ছবি: সংগৃহীত।

‘তারায় তারায়’ গানটি সম্পর্কে জানতে প্রিয়.কম যোগাযোগ করেছিল নগর বাউল ব্যান্ডের বর্তমান ম্যানেজার রবিন ঠাকুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, “তারায় তারায় গানটি রচনা হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। শামসুর রহমানের লেখা একটি কবিতার বই পড়ার সময় ‘উত্তর’ কবিতাটি চোখে পড়ে, ভালো লাগে। তৎক্ষণাতই সুর করে রেকর্ড করে ফেলি। অতঃপর আমি শামসুর রহমানের সঙ্গে তার শ্যামলীর বাড়িতে দেখা করি। শামসুর রাহমান গানটি শুনে বলেছিলেন ‘বাহ! বেশ ভালো হয়েছে তো’। এর পরবর্তীতে প্রায় ১০-১২ দিন পর তিনি আরও দুটি গান দিয়েছিলেন আমাদের। যদিও গান দুটি পরে আর রেকর্ড করা হয়নি। একটি গান ছিল ‘একটা গিটার আছে’ শিরোনামে, আরেকটি হচ্ছে ‘এবার তবে রাতে’। আসলে অনেকদিন আগের কথা তো, তাই পুরোপুরিভাবে অনেক কিছুই মনে নেই। অতঃপর ১৯৯৭ সালে ‘তারায় তারায়’ গানটির একটি মিউজিক ভিডিও হয়েছিল। সেই মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ করেছিলেন শামসুর রাহমান”।

জেমসের কণ্ঠে শামসুর রাহমানের লেখা ‘তারায় তারায়’ গানটি শুনুন এখানে:

ভিডিওটি সংগৃহীত।

আজ কবি ও গীতিকার শামসুর রহমানের ৮৮ তম জন্মদিন। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন এ নাগরিক কবি। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অনবদ্য অবদান রেখে ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট তারিখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। বনানী কবরাস্থানে তাঁর মা আমেনা বেগমের পাশে সমাধিস্থ করা হয় তাকে।

প্রিয় সাহিত্য/গোরা