কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ছবি : সংগৃহীত

জনস্বার্থ মামলার অপব্যবহার করছে অনেকেই: মনজিল মোরসেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৩০
আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৩০

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ-সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। পরিবেশ রক্ষা ও জনস্বার্থ নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে হাইকোর্টে বিভিন্ন রিট দায়ের করে সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করছেন। বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন নদী, খাল-বিলের পানিদূষণ রোধ, হাজারি বাগের ট্যানারি স্থানান্তর ও স্বাস্থ্য বিষয়ে ২৮৪টি মামলা করেছেন এই আইনজীবী। সব মামলাতে রায় না পেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছেন তিনি। তার এই সফলতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের প্রিয়.কমের নিজস্ব প্রতিবেদক। 

প্রিয়.কম : কেমন আছেন

মনজিল : ভালো আছি।

মনজিল : আপনি কেমন আছেন?

প্রিয়.কম : ভালো আছি। জনস্বার্থে আপনি যেসব মামলা করছেন সে সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।

মনজিল : নিশ্চয়। বলুন কী জানতে চান।

প্রিয়.কম : আপনি কী চিন্তা করে জনস্বার্থে বিভিন্ন মামলা করে থাকেন?

মনজিল : দেখুন, ক্ষমতায় না থেকেও সাধারণ মানুষের উপকারের কথা চিন্তা করে ভালো কিছু করা যায়। আদালতের রায়ের মাধ্যমে আমাদের দেশের বিশাল এই জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারি।

প্রিয়.কম : কখন আপনার মাথায় ভাবনাটা আসে?

মনজিল : আমি ২০০৪ সালে এ রকম চিন্তা করি। জনস্বার্থে একা মামলা করা যায়, কিন্তু একা দেশবাসীর পক্ষে দাঁড়ানো কঠিন। তাই চিন্তা করি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের নিয়ে এ রকম একটি সংগঠন করব, যে সংগঠনের মাধ্যমে জনস্বার্থে মামলা করে সাধারণ নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা যায়। তখন একটি মানবাধিকার সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। নাম দেই হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।

প্রিয়.কম : কতজন সদস্য নিয়ে কাজ শুরু করেন?

মনজিল : ২১ জন সদস্য নিয়ে কাজ শুরু করি। এখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২১ জন সদস্য রয়েছেন।

প্রিয়.কম : দেশ-বিদেশে আপনার সংগঠনের শাখা কয়টি?

মনজিল : সারা বাংলাদেশ মোট ২৭টি আইনজীবী সমিতিতে আমার সংগঠনের কার্যক্রম আছে। দেশের বাইরে রয়েছে ৫টি শাখা।

প্রিয়.কম : দেশের বাইরের শাখাগুলোতে আইনজীবী নাকি সাধারণ মানুষ নেতৃত্ব দেয়?

মনজিল : আইনজীবীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমেরিকায় আমাদের এ সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন আইনজীবীরা। বাকিগুলোতে সাধারণ মানুষ কাজ করছেন।

প্রিয়.কম : পরিবেশ ও মানবাধিকার রক্ষায় এ পর্যন্ত কতগুলো মামলা করেছেন?

মনজিল : ২৮৪টি মামলা করেছি। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে। কিছু মামলার বিচারকাজ চলমান।

প্রিয়.কম : গুরুত্বপূর্ণ কী কী মামলা করেছেন?

মনজিল : ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগসহ বিভিন্ন নদীর দূষণ রোধে মামলা করেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন খাল-বিলের বিষয়েও মামলা করেছি। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল রোধে ফরমালিন পরীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে কার্যক্রম; রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির পাহার কাটা বন্ধ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা চেয়ে মামলা করেছি। এ ছাড়া সারাদেশে ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে যে ৭০টি শিশু মারা গিয়েছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলাম। তার ফলও পেয়েছি।

প্রিয়.কম : আইনজীবীদের পক্ষে কী মামলা করেছেন?

মনজিল : দেখুন, আমাদের দেশে ডিসেম্বরে বিচারিক আদালত বন্ধ থাকত। আমি চিন্তা করলাম, আদালত এক মাস বন্ধ থাকলে আইনজীবী ও মক্কেলরা যাবে কোথায়? সে বিষয়টি মাথায় রেখে একটি রিট করেছিলাম উচ্চ আদালতে। আদালত আমার মামলা শুনে রায় দিয়েছেন। তারপর থেকে ডিসেম্বর মাসে বিচারিক আদালতে সিভিল মামলাগুলো শুনানি করা হয়।

প্রিয়.কম : পরিবেশ বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পেলেন। এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কী?

মনজিল : পরিবেশ নিয়ে কাজ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছেন। এ সম্মান বা প্রাপ্তি আমার একার নয়, সবার-যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন।

প্রিয়.কম : জনস্বার্থে মামলা করে কোনো হুমকি পেয়েছেন?

মনজিল : হ্যাঁ, হত্যার হুমকি পেয়ছি। ২০১২, ’১৪ ও ’১৫ সালে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। তারা মূলত আমাকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতেই হুমকি দিয়েছিল।

প্রিয়.কম : জনস্বার্থে মামলা করে জনগণের কাছ থেকে কোনো সাড়া পেয়েছেন?

মনজিল : দেখুন, এ মামলাগুলো করায় দেশ-বিদেশ থেকে অনেক ফোন পেয়েছি। সবাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। এখন আমি আর এ কাজ থেকে বিরত থাকতে চাই না। আমৃত্যু এ কাজ করো যাব।

প্রিয়.কম : সংগঠনের আর্থিক বিষয়ে কোনো ফান্ড আছে? 

মনজিল : দেখুন, আমরা এসব মামলা করে কোনো এনজিওর কাছ থেকে অর্থ পাই না। অর্থ গ্রহণও করি না। আমাদের সংগঠনের সদস্যরা চাঁদা দেন। সে চাঁদা দিয়েই আমরা এসব মামলা করে থাকি।

প্রিয়.কম : জনস্বার্থে করা মামলাগুলো সম্পর্কে উচ্চ আদালত নিয়ে কিছু বলতে চান?

মনজিল : জাস্টিস এবিএম খায়রুল হক, জাস্টিস শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নাঈমা হয়দার, জাস্টিস মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে গিয়ে আমি অনেক ফল পেয়েছি। তাদের অবদান অনেক।

প্রিয়.কম : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মনজিল : প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। অনেক প্রবাসী আছেন, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা থাকায় দেশে আসতে পারছেন না। তারা আমাকে ফোন করে আইনি সহযোগিতা কামনা করেন। আমি তাদের পাশে থেকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে চাই।

প্রিয়.কম : জনস্বার্থ মামলা নিয়ে কিছু বলবেন কি?

মনজিল : দেশে এখন অনেকেই নানা ক্ষেত্রে জনস্বার্থে মামলা করে সুবিধা নিচ্ছে, নিতে চাচ্ছে। যেমন দুই নেত্রীর সংলাপে বসার নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছিল। এতে আসলে জনস্বার্থ বলতে কিছু নেই। জনস্বার্থ মামলার অপব্যবহার করছে অনেকেই। এগুলো মিডিয়ায় লেখালেখির মাধ্যমে বন্ধ করা উচিত।

প্রিয়.কম : সর্বশেষ প্রশ্ন, কোন সোর্সের ভিত্তিতে মামলা করেন জনস্বার্থ নিয়ে?

মনজিল : আমরা বেশিরভাগ জনস্বার্থে মামলা করি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে। আমাদের মামলার শতকরা ৯৮ ভাগ পত্রিকার রিপোর্টের আলোকে করা।

প্রিয়.কম : আপনাকে ধন্যবাদ

মনজিল : আপনাকেও ধন্যবাদ।

 

প্রিয় সংবাদ/আজাদ চৌধুরী