কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সঙ্গীর দ্বারা বিভিন্নভাবে অত্যাচারের সম্মুখীন হলে সেই সম্পর্ক কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। মডেল: ফারহানা ও ঋত্বিক, ছবি: নূর।

যে আটটি কারণে ভেঙ্গে যায় যত্নে গড়া একটি সম্পর্ক

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:১৮
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:১৮

(প্রিয়.কম) সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার কষ্টটা সবসময়ই অনেক বেশী ভোগায়। হোক সেটা ভালোবাসার সম্পর্কের ইতি কিংবা বিবাহিত জীবনের। এই কষ্ট, এই অভিজ্ঞতাকে কখনোই কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কষ্ট সহ্য করতে হবে জেনেও কেন একজন সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসে? এমন প্রশ্ন নিশ্চয় মাথায় কাজ করতেই পারে। এরই সাথে আরো যে চিন্তাটা মাথায় কাজ করে, ভালোবাসার মানুষের সাথে একটু বোঝাপড়া করে থাকতে পারলে নিশ্চয় খুব একটা সমস্যা হবে না! এমন চিন্তা যদি আপনার মাথাতেও উঁকি দিয়ে থাকে তবে জেনে রাখুন, আপনি খুব ভুল ভাবছেন! কখনো কখনো সম্পর্কের মাঝে কিছু ‘কারণ’ চলে আসে, যেগুলো অবহেলায় এবং অনাদরে প্রকট আকার ধারণ করে বলেই একটা সময় পরে সম্পর্কটাকে আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

সকলে নিশ্চয় জানতে ইচ্ছুক কী সেই কারণগুলো, যার কারণে একটি ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় হাজারো মনঃকষ্টের বোঝা মাথায় নিয়ে! নীচে সেই সকল কারণ উল্লেখ করে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কথোপকথনের অভাব

বহু গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার অথবা ডিভোর্স এর প্রধান ও প্রথম কারণ হলো যোগাযোগের অভাব অথবা ‘কমিউনিকেশ গ্যাপ’। ইউনিভার্সিটি ওয়াশিংটনের ডা. জন গটম্যান তার ২০ বছরের রিসার্চ এর পরে প্রকাশ করেন যে, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন গ্যাপ সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। এই যোগাযোগের অভাব থেকেই তৈরি হয় একে অপরের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করা। যেটা অনেক সময় একে অন্যের প্রতি কটাক্ষ করা, খোঁটা দিয়ে কথা বলা, বৈষম্যমূলক আচরণ করার মাধ্যমেও প্রকাশ পায়। বেশ কয়েকটি গবেষণা থেকে আরো দেখা গেছে, যে সকল যুগলদের মাঝে অবজ্ঞাভাব প্রকাশ পায় তারা একে অপরকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা বন্ধ করে দেয়!

দু’জনের প্রত্যাশা এবং অগ্রাধিকারে ভিন্নতা

সম্পর্কে মাঝে দুইজন মানুষের অনেক কিছুর মাঝে মিল থাকলেও, ভিন্নতাও থাকবে অনেক কিছুর মাঝে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কারণ দুইজন ভিন্ন মানুষের মাঝে শতভাগ মিল পাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তবে একটা সম্পর্কে দুইজন মানুষের মাঝে একদম প্রাথমিক কিছু ব্যাপারে মিল থাকার প্রয়োজন খুব বেশী। বিশেষ করে দু’জন মানুষের অগ্রাধিকারের স্থান ও আশা-প্রত্যাশার ক্ষেত্র এক হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক এই দুইটি স্থানে যদি দুইজন মানুষের মাঝে ভিন্নতা দেখা দেয় তবে মনোমালিন্য ও সম্পর্কের মাঝে সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে অনেক ঘনঘন।

সম্পর্কে মাঝে দুইজনের ভিন্ন পথে হাঁটা

সম্পর্ক তৈরি হবার পরে দুইজন মানুষ একটি বিন্দু বা কেন্দ্রে এসে একসাথে হয়। তাদের মাঝে কিছু মিলের প্রেক্ষিতে তারা পরস্পরের সাথে একসাথে পথ চলার, একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে শুধুমাত্র একসাথে পথ চলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমেই একটি সম্পর্ক থেমে থাকে না। সম্পর্কে সময়ের হাত ধরে এগিয়ে চলতে থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এইক্ষেত্রে সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন দুইজন মানুষ ভিন্নভাবে নিজেদের গড়ে ওঠার জন্য কাজ করে! ভিন্নভাবে গড়ে ওঠা বলতে- দুইজনের ভিন্ন পেশা, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী, ভিন্ন মতবাদ ইত্যাদি বোঝায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ভিন্ন পেশার কারণে সমস্যা দেখা দেয়। ভিন্ন কাজের ধরণ, ভিন্ন টাইমিং এবং ভিন্নতা নিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করার ফলে অনেক সময় দুইজনের মাঝে অনেক বেশী মানসিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।

বৈসাদৃশ্য

সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কে থাকা দুজন মানুষ একে অন্যকে ভালো মতো চিনতে, জানতে ও বুঝতে শুরু করে। সম্পর্ক শুরুর আগে একটা মানুষকে যতোটা জানা যায় কিম্বা চেনা যায়, তার চাইতে অনেক বেশী চেনা ও বোঝা যায় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পরে। এরপর থেকেই লক্ষ্য করা যায় একে অন্যের মাঝে কতোটা অমিল বা বৈসাদৃশ্য রয়েছে! ভালোবাসার ও মমতার খাতিরে বেশীরভাগ সময় এই সকল অমিলগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে দু’জনের মাঝে যে সকল মিল রয়েছে সেগুলো নিয়ে অমিলগুলোকে ঢাকতে চেষ্টা করেন অনেক যুগল। যেমন: ‘সে আমাকে সময় দিচ্ছে, এটাই তো অনেক। তার দর্শন আমার সাথে না মিললেও চলবে!’ কিন্তু একটা সময় পরে এই অমিলের ক্ষেত্র থেকেই সমস্যা শুরু হয়। দুইজন মানুষের চিন্তা-ভাবনা, বিশ্বাস, দর্শন, আবেগ-অনুভুতি, বুদ্ধিবৃত্তি ইত্যাদি একই মাপের না হলে এই অমিলের জায়গাগুলো থেকেই সম্পর্কের মাঝে চির ধরা শুরু করে।

সম্পর্ক ছবি

দুইজন মানুষের মাঝে যখন অনেক বেশী বৈসাদৃশ্য দেখা দেয় তখনই সম্পর্কের মাঝে চিড় ধরা শুরু করে। ছবি: রিপন।

পারস্পরিক বিশ্বাসে ঘাটতি

যেকোন সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো ‘বিশ্বাস’। এই একটিমাত্র উপাদান ছাড়া একটা সম্পর্ক কখনোই পরিপূর্ণভাবে দাঁড়াতে পারবে না এবং গড়ে উঠতে পারবে না। বিশ্বাসের ভিত যতোটা গভীর, একটা সম্পর্কের মাঝে বন্ধন তত বেশী মজবুত। তবে কোন সম্পর্কের মাঝে যদি প্রথম থেকেই বিশ্বাস এর ঘাটতি থাকে, সন্দেহ ও অবিশ্বাস থাকে তবে সেই সম্পর্ক যতোই রোম্যান্টিকতায় গড়ে উঠুক না কেন কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হবে না!

অ্যাবিউজ

কোন একটি সম্পর্কের মাঝে একজন যখন অন্যজনকে বিভিন্ন ভাবে ও উপায়ে আহত করে থাকে তখন সেটা অ্যাবিউজ বা অত্যাচার হয়ে দাঁড়ায়। মৌখিকভাবে (গালাগালি করা, কটূক্তি করা), আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত করে, শারীরিকভাবে বিভিন্ন উপায়ে অত্যাচার করার মাধ্যমে সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যিনি তার সঙ্গীর উপরে এমন ধরণের অত্যাচার করে থাকেন তিনি তার সঙ্গীকে কৌশলের মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে থাকেন, সঙ্গীকে বোঝান তার এই অত্যাচারের পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে! তবে একটা সময় পরে অপর সঙ্গী ঠিকই সকল কিছু বুঝে ফেলেন। যার ফলাফল রূপে সম্পর্কের মাঝে ইতি চলে আসে দ্রুত।

বাজে অভ্যাস

কিছু সম্পর্ক অকালেই শেষ হয়ে যায় সঙ্গীর বেশ কিছু বাজে অভ্যাসের জন্য। এই বাজে অভ্যাস বলতে নাক ডেকে ঘুমানো বোঝানো হচ্ছে না মোটেই। এমন কিছু বাজে অভ্যাস, যা কিনা একজন মানুষের জীবনের উপরে অত্যান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। যেমন: অতিরিক্ত মিথ্যাচারিতা, জুয়া খেলা, মাদকদ্রব্য সেবন করা, মদ পান করা, অতিরিক্ত যৌন চাহিদা ইত্যাদি। এই সকল বাজে চারিত্রিক অভ্যাস শুধুমাত্র তার নিজের জীবনের উপরেই নয়, তার সঙ্গী মানুষটার জীবনের উপরেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়।

সম্পর্কের একদম শেষ সীমায় পৌঁছে যাওয়া

কিছু সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুইজন মানুষ একসাথে অনেকদিন পর্যন্ত থাকার পরে একে অপরের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তাদের দুজনের মাঝে কোন ধরণের ভালোবাসা, সম্পর্কের টান, মমতা কিম্বা আগ্রহ একেবারেই থাকে না। শুধুমাত্র অভ্যাসের বশে দুইজন মানুষ একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকেন। এমতাবস্থা থেকে অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ককে পুনর্জীবিত করা গেলেও কিছু সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেটাই সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে দেখা যায় সেই সম্পর্কের মাঝে প্রতিশ্রুতি একেবারেই থাকে না। যার ফলে সম্পর্কের শেষ পরিণতি হয় বিচ্ছেদ।

প্রতিটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে অনেক স্বপ্ন অনেক ভালোবাসা এবং আশা-প্রত্যাশা নিয়ে। উপরোক্ত কারণ সহ আরো নানান কারণে একটা সম্পর্ক যখন শেষ হয়ে যায় তখন প্রচণ্ড মানসিক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। তাই নিজের সম্পর্কের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন সকলের।

সূত্র: Psycho2go  

প্রিয় লাইফ/ কে এন দেয়া