কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে যে মানুষটি বিয়ের জন্য পরিকল্পনা করছিলেন, এখন তিনিই ক্যান্সারের রোগী। ছবি: Cosmopolitan

বিয়ের ৬ মাস আগে ক্যান্সার, অত:পর...

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৪৪
আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৪৪

(প্রিয়.কম) বিয়ে মানেই নারী-পুরুষ উভয়ের জীবনেই দারুণ একটি উত্তেজনা! সে মানুষটি যেমনই হোক না কেন। বিশেষ করে মেয়েরা বিয়ের দিন কী পরবেন, দাওয়াতে কারা থাকবেন, কীভাবে ছবি তুলবেন- এমন স্বপ্নগুলো বুনতে শুরু করেন অনেক আগে থেকেই। নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজের লাইফস্টাইল এডিটর বেথ স্টেনবারের জীবনটাও ছিল এমনই। আসন্ন বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে জল্পনা কল্পনায় বিভোর ছিলেন তিনি। এর মাঝেই এক সকালে আবিষ্কার করেন, তিনি ভয়াবহ অসুস্থ। 

৫ বছর প্রেমের পর প্রেমিক মাইকের সাথে এনগেজমেন্ট হয় তার। ২০১৭ সালের মে মাসের এক সকালে তিনি বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন বান্ধবীর সাথে বসে। নভেম্বরেই তাদের বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছিল। শনিবার সকাল থেকে তার অস্বস্তি লাগা শুরু হয়। আগের দিন একটু ওয়াইন পান করা হয়েছিল, এই ভেবে তাকে পাত্তা দেননি তিনি। কিন্তু রবিবার সকালে প্রচন্ড পেট ব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। তার পেট ফুলে শক্ত হয়ে ছিল, দ্রুতই তার বাগদত্ত মাইক তাকে কাছাকাছি একটি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যান। 

প্রথমে ডাক্তাররা ভাবেন তার অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেছে। কিন্তু আলট্রাসাউন্ডে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর একটি সিটি স্ক্যানে দেখা যায় ১৭ সেন্টিমিটার বড় একটি পিন্ড রয়েছে তার পেটে। এমন অবস্থায় সবাই সাধারণত ব্যথায় চিৎকার করতে থাকে, কিন্তু বেথ ছিলেন একেবারেই চুপচাপ। এ ব্যাপারটায় বেশ ভীত হয়ে ডাক্তাররা তাকে আরো ভালো একটি হাসপাতালে পাঠান। 

রবিবার রাত্রে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি হসপিটালে তাকে নেওয়া হয় এবং পরদিন সকালে তাকে এমআরআই করা হয়। এনগেজমেন্ট রিং পরার পর এই প্রথম তা হাত থেকে খোলেন বেথ। এমআরআই মেশিনের ভেতরে তাকে গভীর নিঃশ্বাস নিতে বলা হয়, কিন্তু তিনি প্রচন্ড ব্যথায় খাবি খাচ্ছিলেন। 

এক ঘন্টার মাঝে একজন নার্স এসে জরুরী অস্ত্রোপচারের জন্য তাকে নিয়ে যান। জ্ঞান ফিরে আসার পর বিশাল একটি ধাক্কা অপেক্ষা করছিল তার জন্য। 

মাইক তাকে জানান, খুবই দুর্লভ একটি ওভারিয়ান ক্যান্সারের শিকার বেথ। গ্র্যানুলোসা সেল টিউমার নামের এই ক্যান্সারের কারণে একটা কমলার আকারের টিউমার ছিল তার পেটে। তার এই টিউমার ফেটে পেটের ভেতরে ছড়িয়ে পড়েছিল। সার্জারির সময়ে টিউমার তো অপসারণ করা হয়ই, এর পাশাপাশি তার একটি ওভারি এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব অপসারণ করা হয়। তার ব্লাডার, ইউটেরাস, অন্ত্র এবং পাকস্থলীর ১৪ টি জায়গা থেকে বায়োপসি করা হয় ক্যান্সার সেল কতটা ছড়িয়ে পড়েছে তা বোঝার জন্য। 

সার্জারির পর প্রচন্ড ব্যথা এবং উৎকণ্ঠায় কাটে তার প্রথম দিনটি। বিয়ের জন্য শরীরের যে যত্ন নিচ্ছিলেন, তার শেষ চিহ্নটিও দূর হয়ে যায় শরীর থেকে। স্যালাইন দেবার কারণে ফুলে যায় তার মুখ, সার্জারির সময়ে রক্তক্ষরণ হওয়াতে ফ্যাকাশে হয়ে পড়েন তিনি। আর পেটের পুরোটা জুড়ে বেগুনী আর হলুদ কালশিটে পড়ে আছে। 

মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে যে মানুষটি বিয়ের জন্য পরিকল্পনা করছিলেন, এখন তিনিই ক্যান্সারের রোগী, নেই তার জীবনের নিশ্চয়তা। বুধবার অনেকটা সময় নিয়ে আলোচনা করেন মাইক এবং বেথ। বিয়ের অনুষ্ঠান কি স্থগিত করা হবে? ছোট করে অনুষ্ঠান করা হবে? নাকি একেবারেই বাতিল করা হবে? তার জীবনের সবকিছুই ক্যান্সার চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল। ক্যান্সার কি তার শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে? সার্জারি ঠিকঠাক হলেও কী তিনি ছয় মাসের মাঝে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সুস্থ হয়ে উঠবেন?

মাথা ঠাণ্ডা রেখেই এসব পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে কষ্টে কুঁকড়ে যাচ্ছিল তার মন। চারদিনের মাথায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময়ের মাঝেই সার্জারি এবং স্যালাইনের কারণে এতটাই ফেঁপে যায় তার শরীর যে তার পুরনো পোশাক আর পরতে পারছিলেন না। ক্যান্সারের চিন্তার পাশাপাশি হাসপাতালের বিশাল বিলটাও তাকে দুশ্চিন্তায় ভারী করে তোলে। এত খরচের পাশাপাশি কী করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবেন তারা?

wedding

এরপরেও তারা ঠিক করলেন, সময়মতোই বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। কিছু কিছু পরিবর্তন আনতেই হয়। অতিরিক্ত খরচগুলো ছেঁটে ফেলেন তারা। বিয়ের উপহারের পরিবর্তে অতিথিদের ডোনেশন দেবার আহবান জানান যাতে হাসপাতালের বিল তাতে উঠে যায়। 

মে মাসে আবার হাসপাতালে যেতে হয় বেথকে। তাকে জানানো হয়, এ ধরণের ক্যান্সারে কেমো বা রেডিয়েশন থেরাপি তেমন কাজ করে না। আর তার শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েনি, ফলে আপাতত আর কোন চিকিৎসার দরকার নেই। 

এ ব্যাপারটা তাদের দুজনকেই খুশি করে তোলে। তবে ক্যান্সারের কারণে কিছু কিছু ব্যাপার ইতোমধ্যেই বাদ দিতে হয় তাদেরকে। হরমোনের ভারসাম্য ব্যহত হওয়ায় এ সময়ের মাঝেই বেথের ওজন বেড়ে যায় ২০ কেজি। তিনি বিয়ের জন্য শখ করে যে গাউন কিনেছেন, তা পরতে পারেননি আর, তাড়াহুড়ো করে সাধারণ একটি পোশাক কিনে নেন। ভবিষ্যতে সন্তানের সম্ভাবনাও তাদের কমে আসে। শুধু তাই নয়, এই ক্যান্সার ফিরে আসারও সম্ভাবনা থাকে ১০ শতাংশ। এসব ভেবে নিয়েই তাদের পরিকল্পনা চলতে থাকে। 

এই পুরো সময়টায় শক্ত থাকার চেষ্টা করেন বেথ। কিন্তু বিয়ের ৩ সপ্তাহ আগে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে হঠাৎ করেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বিগত ছয় মাসের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর ভয় এক হয়ে তাকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার জানান, আপাতত তার ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। 

একটু একটু করে আগের মতই বিয়ের দিনটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকেন বেথ। ছোট ছোট সমস্যা সব বিয়েতেই দেখা যায়, সেগুলো বাদ দিয়ে ভাবতে গেলে আসলেই নিজের মনের মত দিনটি কাটান তিনি। দিনের শেষে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন, কিন্তু খুশিতে ভরে ওঠে তার মন। 

তিন মাস হয়ে এসেছে তাদের বিয়ের পর। এ সময়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে তার জীবন। ক্যান্সার ধরা পড়ার পর অনেকেই বিয়ের অনুষ্ঠান করার সাহস করেন না। কিন্তু এটাই তার জন্য ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, মনে করেন মাইক এবং বেথ। অসুস্থতা এবং জীবনের ঝুঁকির মাঝেও যে তাদের ভালোবাসা টিকে গেছে, এটাই তাদের আনন্দ। 

সূত্র: Cosmopolitan

প্রিয় লাইফ/ আর বি