কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ান সমর্থক। ছবি: প্রিয়.কম

‘বাংলাদেশের সবাই খুব বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহজ সরল’

সামিউল ইসলাম শোভন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:৫০
আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:৫০

(প্রিয়.কম, চট্টগ্রাম থেকে)  কাম অন প্যাটি, কাম অন! হোয়াট আ বোলিং! প্যাট কামিন্সকে সমর্থন দিতে গিয়ে ফেটে পড়ছিলেন ড্যান। হাতে ধরা অস্ট্রেলিয়ার পতাকা। জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামের হসপিটালিটি বক্সের ছাদে তার সঙ্গে আরও চার অস্ট্রেলিয়ান। আশেপাশে থাকা শখানেক বাংলাদেশির সম্মিলিত উল্লাসও যেন হার মানছিলো তাদের কাছে। হাজার মাইল দূরে এই ছোট্ট দলটাই গ্যালারিতে অস্ট্রেলিয়া দলের সবচেয়ে আপনজন, সেটাই যেন প্রমাণ করছিলো তারা।

বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। পুরো স্টেডিয়ামে খুঁজে এই পাঁচজন অস্ট্রেলিয়ান সমর্থককে পাওয়া গেল। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে এসে তারা যেন নিজেদের নতুনভাবে খুঁজে পেয়েছেন। সাগরপাড়ের স্টেডিয়াম তাদেরকে মুগ্ধ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দেখতে এসে বাংলাদেশ সম্পর্কেও ভালো ধারণা নিয়ে যাচ্ছে তারা। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ, খাবার ও ক্রিকেট প্রসঙ্গে তাদের ভাবনাটা বেশ স্বচ্ছ ও ইতিবাচক।

তিনজন পুরুষ ও দুজন মহিলার এই দল প্রসঙ্গে ড্যান জানালেন, এখানে দম্পতি আছে দুটি। প্রথমটি তিনি ও তার স্ত্রী জেনিফার, অপরটি রজার ও ডায়ানা। বাকি থাকলেন স্টিভ রুকি। পাঁচজনের মধ্যে দুজন এসেছেন ডারউইন থেকে, বাকিরা সিডনির বাসিন্দা। বাংলাদেশ তাদেরকে মুগ্ধ করেছে উল্লেখ করে ড্যান জানালেন, এখানকার সবাই খুব সহজসরল ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

ড্যান-জেনিফার দম্পতি। ছবি: প্রিয়.কম

কথার ফাঁকে ফাঁকেই খেলা দেখা চলছিলো। তবে সবার পুরো মনোযোগটা ছিলো সেদিকেই। প্রতি বলেই মাঠের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছিলো সমর্থনবাক্য। এক ফাঁকে ড্যান বললেন, আসার পর থেকেই দেখছি এখানকার মানুষ সবাই খুব বন্ধুত্বপূর্ণ। কারো মধ্যে কোন জটিলতা নেই। সবাই খুব সহজসরল। মিরপুর টেস্টের আগে এসেছি, এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। এরা নিজেরাও খুব ক্রিকেটপ্রেমী।

ড্যান থামতেই এগিয়ে এলেন ডায়ানা। নিজ থেকেই গাইলেন বাংলাদেশি খাবারের স্তুতি। এখানকার বিরিয়ানীর প্রেমে পড়েছেন তিনি! বললেন, স্থানীয় প্রায় সব খাবারেই ঝালের পরিমাণ বেশি। তবে বিরিয়ানিকে ভালোবেসে ফেলেছি। খুব ভালো খেতে। অন্যান্য খাবারও খেয়েছি। ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে এসে সামুদ্রিক মাছ বেশি খাচ্ছি।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার এই সিরিজটি হওয়ার কথা ছিলো ২০১৫ সালে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে আসা হয়নি স্মিথদের। সেবার শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। এবারও নিরাপত্তার ব্যাপারটি মাথায় ছিলো সিএর। তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। কিন্তু এই আওতায় পড়ছে না এখানে সমর্থন দিতে আসা অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকরা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনা কি এই পাঁচ অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকের?

উত্তরে ড্যান বললেন, নিরাপত্তার বিষয়টি মাথাতেই নেই আমাদের। এখানে এসব নিয়ে কোন সমস্যাই হচ্ছে না। আমরা আমাদের ইচ্ছে মতো ঘুরছি, খাচ্ছি। কারো কাছে সাহায্য চাইলে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসছে। এখানে এসে খুবই খুশি লাগছে আমাদের। এমনকি ঢাকা টেস্টের পর এখানে এসে সবাই মিলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ঘুরে এসেছি, কোন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়িনি।

রজার ও ডায়ানা। ছবি: প্রিয়.কম

তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রুকি বললেন, ড্যান একটা কথা বলতে ভুলে গেছে। আমরা কিন্তু ২০১৫ সালেও আসতে চেয়েছিলাম। আমি, ড্যান আর জেনিফার। আমরা বিমানের টিকিটও করে ফেলেছিলাম। কিন্তু সফর শেষ মুহূর্তে বাতিল হওয়ার কারণে আসতে পারিনি। সেবার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সফর বাতিল হয়ে যায়। এবার এসে তেমন কিছুই মনে হলো না। আমরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে বাংলাদেশে বেড়াচ্ছি, নিজের দেশের মতো ঘুরছি।

জানা গেল, তারা যতটা না ক্রিকেটপ্রমী তার চেয়েও বেশি পর্যটক। তবে হ্যা, বেড়ানোর পুরোটাই ক্রিকেট দলকে ঘিরে। তাদের ভাষায়, 'বিশ্বের যেখানেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল খেলতে যায়, আমরাও যাই। সব জায়গায় বেড়াতে ভালো লাগে।'

তারপরই এলো ক্রিকেটীয় আলাপ। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে স্টিভেনদের মতো তাদের এই সমর্থকরাও জয় পেতে মরিয়া। মজা করে রুকি বললেন, বাংলাদেশ ভালো খেলেছে প্রথম ম্যাচে, তোমরা তাই জিতেছ। তবে এবার তোমাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। আমরা ঘুরে দাঁড়াবো।

এতোক্ষণ সামনে থেকে পতাকা নেড়ে সমর্থন দিচ্ছিলেন জেনিফার। রুকির কথা শুনে এগিয়ে এসে বললেন, এই ম্যাচে আমরাই জিতছি। তবে হ্যা, বাংলাদেশ এখন অনেক ভালো খেলছে। সাকিব-মুশফিক, ব্যাটসম্যান তামিম এরা খুব ভালো খেলে। বিশ্বমানের সবাই। আমি মিরাজকেও চিনি, সেও ভালো!

কথা শেষ হতেই নাসির হোসেনকে কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেরালেন অ্যাস্টন অ্যাগার। সব ফেলে পাঁচজনই লাফিয়ে উঠলো একসাথে। চোখেমুখে আলোর ছটা নিয়ে সঙ্গে থাকা মাত্র দুটি পতাকা নাড়তে থাকলো স্মিথ-ওয়ার্নারদের দিকে। এই বিশেষ বিভূঁইয়ে তারাই যে সবচেয়ে আপন!