কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সফল ব্যক্তিরা করে এমন ১০০টি বিষয়: সফল জীবনযাপনের ছোট্ট অনুশীলন’ বইটি হাতে অনুবাদক বুশরা আমিন তুবা। ছবি: নূর, প্রিয়.কম।

সফল ব্যক্তিদের ১০০ জীবনচর্চা (অনুশীলন ১০০): 'কোন কিছুর জন্যে আফসোস রাখবেন না'

বুশরা আমিন তুবা
ফিচার লেখক, প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৩১
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৩১

(প্রিয়.কম) প্রিয় পাঠক, আপনাদের জন্য রয়েছে আমাদের এ নতুন আয়োজন। এখানে 'দ্য সিল্ক রোড পার্টনারশিপ' এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাইজেল কাম্বারল্যান্ড লিখিত একটি বইয়ের সাথে আপনাদের পরিচয় করানো হবে। বইটির শিরোনাম, 'হান্ড্রেড থিংস সাকসেসফুল পিপল ডু: লিটল এক্সারসাইজেস ফর সাকসেসফুল লিভিং’। এবং আমরা বইটি অনুবাদ করছি "সফল ব্যক্তিদের ১০০ জীবনচর্চা" শিরোনামে। সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজনে প্রতিদিন এই বই থেকে একটি করে বিষয় আলোচনা করা হবে। আজকের আয়োজনে জেনে নিন সফল ব্যক্তিদের করা ১০০ নম্বর বিষয়টি সম্পর্কে।

অনুশীলন ১০০: 'কোন কিছুর জন্যে আফসোস রাখবেন না' 

পৃথিবীতে নানান ধরনের মানুষ আছেন, তবুও মৃত্যুকালে সবাই-ই একই ধরনের আফসোস করেন। একজন অস্ট্রেলিয়ান সেবিকা সারা জীবন মৃতপ্রায় রোগীদের সেবা করে কাটিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে কথোপথনের সময়ে তিনি তাদের কয়েকটি গভীর বেদনা ও আফসোসের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন।

- অন্যের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জীবন না কাটিয়ে স্বাধীনভাবে, নিজের মত করে জীবন উপভোগ করতে পারতাম!

- এতো কঠোর পরিশ্রম না করতাম!

- নিজের অনুভূতিগুলো দমিয়ে না রেখে জীবন কাটাতাম! 

- বন্ধুদেরকে আরো সময় দিতে পারতাম আর সময়ের সাথে এত বন্ধু হারিয়ে না ফেলতাম!

- জীবনকে সিরিয়াসলি না নিয়ে আমি একটু সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতাম!

আমরা প্রতিদিন ছোটখাটো যে আফসোসগুলো করি সেগুলোই মৃত্যু শিয়রে গিয়ে বড় আকার ধারণ করে। প্রায়ই আমরা অতীতের কথা ভাবতে থাকি এবং ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে যাই। আজ থেকে যেকোন ধরনের আফসোস করা বন্ধ করে দিন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন ও সময় নিন।

আপনার কার সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন

জীবনে কারো প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলে গিয়েছেন আপনি? আপনার জন্যে কে কষ্ট এবং দুর্দশা ভোগ করেছে? এখন আপনার সময় হয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার। তাদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন আবার তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনও করতে পারেন। মিষ্টি সুরে 'ভালোবাসি' বলাটাও হয়ত কারো জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

আপনার আসলে কী করা উচিৎ?

নিজের জন্য, বা অন্যের জন্য কোনো বিশেষ কাজ করার ক্ষেত্রে কি আপনি সংকোচ বোধ করছেন? সেই কাজটি করুন। 

আশা করি এ বই আপনাকে আপনার হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফেরত আনতে সাহায্য করবে। এ বই আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে নতুন করে জীবনকে চিনতে, জানতে ও ভালোবাসতে।

যবনিকাপাত

আমার ছয় মাস লেগেছে বইটির ড্রাফটের কাজ শেষ করতে। পরবর্তী ছয় মাস 'জন মারে লার্নিং' এর একটি টিম পাণ্ডুলিপি থেকে পরিপূর্ণ ও আকর্ষণীয় এই বই বের করে আনে। 

মোট বারো মাসে আমি বুঝতে পেরেছি, 'মাত্র একশটি উপায় অনুসরণ করে আপনি কীভাবে সফল হলেন?' এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কত কঠিন। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কথা আমি এখন অনুভব করতে পারি যে 'শিল্পকর্ম কখনো শেষ হয় না, তা কেবল অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়'। বইটি পড়ে আপনি হয়তো ইতোমধ্যে অনুভব করেছেন যে, অনেকগুলো উপায় একটির সাথে আরেকটি জড়িত, এবং জীবনে সাফল্যের মত এত জটিল ব্যাপারটি একশটি আলাদা ছকে ফেলা খুবই কঠিন।  এই একশটি বিষয় নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করতে হবে। সফলতার বিভিন্ন উপায় আমাদের জীবনের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সেগুলোকে সুন্দর মতন অনুসরণ করার মাঝেই প্রকৃত সাফল্যের স্বাদ নিহিত। 

বইটি লেখার সময়, প্রুফ দেখার সময় এবং বইটির সম্পাদক আইয়ান ক্যাম্পবেলের সঙ্গে কথা বলে আমি একশটি বৈশিষ্টের সঙ্গে আরো দু'টি যোগ করতে চাই। সফলতা অর্জন করতে ওগুলোর সঙ্গে এ দুইটি বৈশিষ্ট্যকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। সেগুলো হলো,

- সর্বদা ত্যাগ করার মানসিকতা থাকতে হবে।

- জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, এটি আপন তালে এগিয়ে চলে।

চলুন এগুলো বিস্তারিত জেনে আসা যাক।

সর্বদা বিসর্জন কিংবা ত্যাগ করার মানসিকতা থাকতে হবে

আমার যদি ব্যক্তিগত কোন লক্ষ্য থেকে থাকে, তবে সেটি হবে 'সর্বদা ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন' জীবনের এ পর্যায়ে এসে আমি অনেক কিছু বিসর্জন দিয়েছি। এটি আমার অষ্টম বই। যেটি লেখার জন্য আমি একাধারে বারোটি মাস রাতের পর রাত গবেষণা করে, টাইপ করে এবং চিন্তা করে কাটিয়েছি। বিন্দুমাত্র ছুটিও নিইনি। বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাইনি, যোগাযোগ গড়ে তুলিনি এমনকি নতুন ক্লায়েন্টদের সঙ্গেও সেশন ঠিক করতে পারিনি এ সময়টুকুতে। 

পুরো পৃথিবীকে সফলতার সূত্র জানাতে চেয়ে আমি নিজে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাদানে কম সময় ব্যয় করেছি। এমনকি আমার তরুণ পুত্রকেও বাড়ির কাজে সময় দিতে পারিনি। অর্থনীতিতে একটি শব্দ আছে 'Opportunity Cost' তার অর্থ হলো জীবনে পুরোপুরি সফলতা অর্জন করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হবে।

আপন সফলতার জন্যে আপনি কী বিসর্জন দিতে পারবেন? বইয়ের শেষ যেহেতু তাই আপনি এখন নিশ্চিন্তে এ প্রশ্নের উত্তর চিন্তা করতে পারেন।

জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, এটি আপন গতিতে এগিয়ে চলে

এ বইটি লেখার বারো মাসে আমি অসংখ্য ব্যথা, দুর্যোগ ও ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছি। তন্মধ্যে কয়েকটি বেদনাদায়ক মুহূর্ত আমি আমার পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই,

- আমার ছেলের খুব কাছের একজন বন্ধু জিসিএসই পরীক্ষার মধ্যখানে মারা যায়।

- আমার এক বন্ধুর পনেরো বছরের পুরনো কোম্পানি যেখানে কী না কয়েকশ মানুষ কাজ করতো, সেটি দেউলিয়া হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। 

- আমার বাবা-মায়ের খুব কাছের কিছু বন্ধু বেশ অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। 

- আমার বন্ধুর স্ত্রীর ক্যান্সার শেষের পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ে।

- আমার ভাইয়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

জীবনে আপনার কিংবা আপনার আশেপাশের নানা মানুষেরও হয়তো এমন অভিজ্ঞতা হয়। সকল স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে তখন ঠুনকো বলে মনে হয়। এমনকি সে সময়টা পুরোটাই কষ্ট, দুর্দশা, ভয় এবং বিষ্ময়ে কাটে। 

রবার্ট ফ্রস্টের গল্পটা মনে আছে তো? এসবের মধ্য দিয়েই আমাদের জীবন বয়ে চলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পুনরায় নিজের স্বপ্ন ও লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য সচেষ্ট হই। আপনার দুঃখ-দুর্দশার অভিজ্ঞতাই আপনাকে পরিপূর্ণ করে তোলে। আপনার প্রায়োরিটির পরিবর্তন ও আসে, নিঃসন্দেহে! নতুন স্পোর্টস গাড়ি কেনার বদলে আপনি আশা করেন শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী জীবনের। 

এবং অবশেষে...

সফলতার পথে পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো? আমার সঙ্গে লিংকডইন কিংবা ফেসবুকে যোগাযোগ করতে পারেন। শুভকামনা রইলো। 

প্রিয় লাইফ/ কে এন দেয়া